বিএনপি নেতাদের মতো বাংলাদেশকে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য বানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এমনই অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার দুপুরে মুজিব কন্যা এদিন আওয়ামী লীগের একটি ভার্চুয়াল ভাষণে একথা বলেন।
বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট তাঁর সরকারের পতনের পর পদ্মার দুই পার দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। বারবার রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও রাজনৈতিক খুনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বমঞ্চে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকমাসের শাসনেও সেই অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। ভারতে চলে আসার পর এতদিন কোনও উচ্চবাচ্য না করলেও এবার বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ইউনূসকে চোর তকমা দিয়ে বলেছেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দেখানো পথেই চলছে মুহাম্মদ ইউনূস। মুখ খুলেছেন বিএনপি-র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও।
এদিন দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে একটি ভার্চুয়াল সভায় ভাষণ দেন হাসিনা। এক ঘণ্টার সেই ভাষণে একাধিকবার বিএনপি এবং খালেদাকে নিশানা করেছেন। ছেড়ে দেননি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকেও। তবে এদিন তাঁর আক্রমণের মূল নিশানা ছিল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি, ১৯৭২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষাতা– এই তিন নীতি বাদ দেওয়া প্রসঙ্গেও সরব হয়েছেন। তিনি ইউনূস সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সাবধান, জনগণের তৈরি সংবিধান বদলের চেষ্টা করবেন না। আপনার সেই নৈতিক এবং আইনি অধিকার নেই।’
এদিন হাসিনা বলেন,‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সাজা মকুব করে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েও একইভাবে খুনিদের মন্ত্রী করেন, দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন। এখন মুহাম্মদ ইউনূস দেশ বিরোধী অপরাধী এবং জঙ্গিদের জেল থেকে মুক্ত করে দিচ্ছেন।’ আওয়ামী লীগ নেত্রী আরও বলেন, ‘ইউনূস বাংলাদেশকে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য বানিয়েছেন।’
এই ভার্চুয়াল ভাষণে কথা প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লিগ একাই ২৩০টি আসন পেয়েছিল। সেখানে বিএনপি পেয়েছিল ৩০টি আসন। আর তখন থেকেই আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে বিএনপি। প্রসঙ্গত খালেদা এখন চিকিৎসাধীর জন্য লন্ডনে রয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের প্রবর্তিত নতুন কর ব্যবস্থা নিয়েও সরব হয়েছেন হাসিনা। ইউনূসের পাঁচ মাসের জমানায় মুদ্রাস্ফিতি নজিরবিহীন এবং অসহনীয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের কাঠগড়ায় তুলে ‘চোর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দেশে প্রায় শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বসানো নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে। হাসিনা ভাষণে ইউনুস সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলায় একটা কথা আছে, চোরের মায়ের বড় গলা। ইউনূস হল তেমন মানুষ। তিনি কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের উপর কর চাপাচ্ছেন। তাঁর কি কর চাপানোর নৈতিক অধিকার আছে?’
হাসিনা ইউনূস সরকারকে নিশানা করে আরও বলেন, ‘জিনিসপত্রের এত দাম যে মানুষ বাজারে গিয়ে পকেটে হাত না গিয়ে মাথায় হাত দিচ্ছে। আমার সময় কেমন ছিলেন দেশবাসীর সেটা তুলনা করে দেখা উচিত।’ প্রসঙ্গত এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর এই ভাষণ চলাকালীন রাজধানী ঢাকার রাজপথে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা এক প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন।
উল্লেখ্য, হাসিনা এতদিন ভার্চুয়াল সভায় মূলত ইউনূসকে আক্রমণ করে গেলেও খালেদা জিয়া ও তাঁর দল সম্পর্কে প্রায় নীরবই ছিলেন। যা থেকে আওয়ামী লিগের একাংশ এবং রাজনৈতির মহলের ধারণা হয়েছিল, নেত্রী দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিএনপির প্রতি নরম মনোভাবাপন্ন হয়েছেন। হয়তো বাংলাদেশে বর্তমানে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে উঠতে চলেছে। কারণ গত শতকের নয়ের দশকে এরশাদ সরকারকে হটাতে হাসিনা ও খালেদা একযোগে ময়দানে নেমেছিলেন। এবারও হয়তো সেরকম কিছু হতে চলেছে। কিন্তু সেই ভুল ভেঙে দিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেত্রী। অতীত ইতিহাস তুলে বিএনপির ওপর বিষোদ্গার করার পর ইউনূসকেও একই সারিতে বসিয়ে দিলেন তিনি।