বাংলাদেশ সংলগ্ন মংডু শহর সহ মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এর জেরে ফের একবার বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মংডু, বুথিডং, পালেতাওয়ার শহর-সহ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। ফলে সেখানে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে উদ্বিগ্ন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে হলে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক্ষেত্রে মায়ানমার সরকার সহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। তিনি বলেন, ‘রাখাইন প্রদেশের ৮০-৮৫ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। বিশেষ করে যে সব এলাকায় রোহিঙ্গাদের প্রধান বসবাস, সেগুলি তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর চেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তও আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।’
খলিলুর জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি বনাম মায়ানমারের শাসক সামরিক জুন্টা বাহিনীর লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফল কী হয়, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে উদ্যোগী হচ্ছে, যাতে অন্তত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে গভীর ভাবে বিবেচনা না করে এ বিষয়ে নির্ণায়ক কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। বিদ্রোহীরা সীমান্ত দখলের পরে বাংলাদেশ সরকার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে। ফলে অসুবিধায় পড়েছেন চট্টগ্রাম ডিভিশনের বহু মানুষ।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৩টি শিবিরে মোট ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা বসবাস করে বলে জানা গিয়েছে। এখনও প্রায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গা মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে থাকে। এরই মাঝে অভিযোগ উঠেছে, মংডু শহর দখলের পর থেকেই রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার শুরু করেছে এড়ালেন আর্মির সদস্যরা। যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
এছাড়াও রোহিঙ্গারা কক্সবাজার এলাকার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে। অর্থ উপার্জনের জন্য মাদক পাচার, মানব পাচার, অস্ত্র পাচারের মতো কাজে যুক্ত রোহিঙ্গারা। এই পরিস্থিতিতে আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে ইউনূসের। ফলে বান্দরবান এবং কক্সবাজার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।
এদিকে আরাকান আর্মির কবল থেকে রাখাইন প্রদেশ মায়ানমার সেনার পক্ষে পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সমর বিশেষজ্ঞরা। আরাকান আর্মি চূড়ান্ত জয় হাসিল করার পর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নয়। তবে মায়ানমার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা সাংবাদিক ও সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা তারা রাখাইন প্রদেশকে পৃথক রাষ্ট্র ঘোষণা করতে পারে। এই পরিস্থিতি আঁচ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনই আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জানিয়েছেন তারা মায়ানমারের ওই বেসরকারি সেনা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের যাতে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে না দেওয়া হয় সে জন্যই ঢাকার এই উদ্যোগ। রাখাইন প্রদেশ আরাকানদের দখলে চলে যাচ্ছে আঁচ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েক লাখ মানুষ বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে বাদ দিয়ে কোনও কিছুই করা সম্ভব হবে না বাংলাদেশের জন্য। তাই এখন সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে ইউনূস সরকার।