ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার পথে হাঁটল না বাংলাদেশ। ৫০ জন বিচারকের ভারত সফর বাতিল করে দিল ইউনূস সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্যপ্রদেশের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি এবং স্টেট জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা ছিল ওই বিচারকদের। রবিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাতিল করেছে বাংলাদেশের আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রক।
আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশিক্ষণ) ড. আবুল হাসানাত সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল অ্যাকাডেমি, ভোপাল এবং একটি স্টেট জুডিসিয়াল অ্যাকাডেমিতে আগামী ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য দেশের ৫০ বিচার বিভাগীয় আধিকারিককে অনুমতি দিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক বাতিল করা হল।
২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৫০ জন বিচারকের ভারতে প্রশিক্ষণের বিষয়টিতে অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি দেয় বাংলাদেশের আইন মন্ত্রক। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলার কথা ছিল। সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ এবং সমমানের পদমর্যাদার বিচারকদের এই প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিতও করা হয়।
আইন ও বিচার বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি (প্রশিক্ষণ) ড. আবুল হাসানাত গোটা বিষয়টির দেখভাল করছিলেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক একটি সার্কুলারে জানায়, প্রশিক্ষণের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার ভারত সরকার বহন করবে। এতে বাংলাদেশ সরকারের কোনও আর্থিক দায় নেই। রবিবার আগের অনুমতি বাতিল করে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রক, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর জজ-সহ বিভিন্ন মন্ত্রক বিভাগ ও সংস্থাকে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
ওই সমঝোতা স্মারকের পর সে-বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে উচ্চ-আদালতের বিচারকদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের প্রতিটি রাজ্যে উচ্চ আদালতের বিচারকদের ট্রেনিংয়ের জন্য একটি জুডিশিয়ারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে। সেখানে আমাদের ১৫০০ থেকে ১৬০০ বিচারকের ট্রেনিংয়ের জন্য চুক্তি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান বাংলাদেশের বিচারকরা। তারপর থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের অনেক বিচারক মধ্যপ্রদেশের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি এবং স্টেট জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।