আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। ইউনূস একটি চিঠিতে ট্রাম্পকে লেখেন , ‘একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ শান্তি, সম্প্রীতি, স্থিতি এবং সমৃদ্ধির জন্য আপনার সহযোগিতা পেতে উন্মুখ।’ ইউনূস লেখেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনার নেতৃত্বে আমেরিকা উন্নতি করবে ও বিশ্ব জুড়ে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’ তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশ ও আমেরিকার পরস্পরের স্বার্থ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ইতিহাসে আবদ্ধ । দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে এবং উন্নয়নের জন্য এক সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা উন্মুখ।’
চিঠির বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক মহলের অনুমান, মার্কিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে স্বচ্ছন্দ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হয়েছেন ইউনূস। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে দীপাবলি উপলক্ষে তাঁর টুইটে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঝড় তুলেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর হিংসার তীব্র নিন্দা জানাই, যাঁরা বাংলাদেশে আক্রমণ ও লুটপাট করছে এবং যার জন্য এই দেশ সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।’
অতীতের ইতিহাস বলে, ইউনূস-ট্রাম্প সমীকরণ খুব একটা মধুর নয়। সেপ্টেম্বরে ইউনূস আমেরিকা সফরে গিয়ে বারাক ওবামা, বিল ক্লিন্টন-সহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেও ট্রাম্প বা কোনও রিপাবলিকানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এছাড়াও সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে ক্ষমতা রদবদলের সঙ্গে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের সংযোগ নিয়েও যথেষ্ট চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে। ফলে ট্রাম্পের জমানায় বাংলাদেশ-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইউনূস এবং ট্রাম্পের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প হিলারিকে পরাজিত করার পরে ইউনূসের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘ট্রাম্পের জয় আমাদের এতটাই আঘাত করেছে যে আজ সকালে আমি খুব কমই কথা বলতে পারি… আমি সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছি… আমাদের এই বিষণ্নতাকে বিষণ্নতায় যেতে দেওয়া উচিত নয়, আমরা এই কালো মেঘগুলি কাটিয়ে উঠব।’ প্যারিসে সমাজ-বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছিলেন ইউনূস।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ের পর, বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ওয়াশিংটনে যায়। প্রথম সাক্ষাতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ঢাকার মাইক্রোফাইন্যান্সের সেই ব্যক্তি কোথায় ? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, ইউনূস ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছিলেন। ফলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনূসের নেতৃত্বে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোন পথে এগোবে তা আগামীদিনে স্পষ্ট হবে।