দক্ষিণ কোরিয়ার আইনসভা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত করল সেই দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলকে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে শনিবার দ্বিতীয়বারের জন্য ইমপিচের প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হয়। সেখানে ৩০০ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ২০৪ জন জনপ্রতিনিধি ইয়ুন সুক ইওলকে বরখাস্ত করার পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ৮৫টি। ৩ জন আইনপ্রণেতা ভোটদানে বিরত থাকেন এবং ৮টি ভোট বাতিল হয়ে যায়। তবে এখনই ইওলকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যেতে হবে না। এবার তাঁর অপসারণ বহাল রাখা হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করবে সাংবিধানিক আদালত। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৮০ দিনের মধ্যে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আদালত যদি ইওলের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তাহলে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইমপিচড হবেন। এরপর ৬০ দিনের মধ্যে ফের দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত ইয়ুন সুক ইওল
বিরোধী দল একে ‘জনগণের জয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসন জারির চেষ্টার কারণে বিরোধী দলগুলি প্রেসিডেন্ট ইওলের ইমপিচমেন্টের পক্ষে সওয়াল করে। গত ৭ ডিসেম্বর সেই দেশের প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রথম প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচের চেষ্টা করে। প্রসঙ্গত, ইয়ুন সুক ইওলকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইমপিচ করার জন্যে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন ছিল। এই আবহে ইওলের ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্থগিত করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, ইয়ুনকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরাতে সংসদের ২০০ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। তার থেকে ৪টি বেশি ভোট পড়েছে ইয়ুনকে ইমপিচ করার পক্ষে। এদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং আরও কিছু ছোটখাটো দল মিলিয়ে বিরোধীদের সংখ্যা ছিল ১৯২।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক শাসন জারি করেছিলেন সেখানকার রাষ্ট্রপতি ইয়ুন সুক ইওল। ইয়ুন সুক ইওল ঘোষণা করেছিলেন, কমিউনিস্ট শক্তি থেকে দেশকে রক্ষার জন্য মার্শাল ল জারি করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ ছিল, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা। প্রেসিডেন্টের ভাষণের পরই দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে দিকে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। শাসক দলেরও অনেকে সামরিক আইন জারি করার বিষয়টির বিরোধিতা করেন। এই আবহে দক্ষিণ করিয়ার সংসদের ভোটাভুটিতে সেই সামরিক শাসনের অবসান ঘটে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছিল ১৯০টি। সংসদে সেই সংখ্যক সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় শাসকদল পিপল পাওয়ার পার্টির ১০ জন সংসদ সদস্যও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। তারপর ৪ ডিসেম্বর সকালে ক্যাবিনেট বৈঠক করে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর থেকে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে নেন ইয়ুন। সব মিলিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টার জন্যে দেশে সামরিক আইন জারি ছিল।
তবে সামরিক আইন প্রত্যাহার করার পরেও ইওলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রেসিডেন্টকে বরখাস্তের দাবি ওঠে। শনিবার পার্লামেন্টে যখন ভোটাভুটি প্রক্রিয়া চলছে, তখন বাইরে বহু মানুষ জড়ো হন। পোস্টার হাতে বিক্ষোভে শামিল হন তাঁরা ।