প্রয়াত হলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। রবিবার জর্জিয়াতে এই নোবেলজয়ী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছেন তাঁর পুত্র জেমস তৃতীয় ই কার্টার। তবে কী করণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে সেবিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্টার সেন্টার একটি বিবৃতিতে জানায়, বেশ কয়েকবার হাসপাতালে থাকার পর, প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি পুনরায় চিকিৎসা করা বন্ধ করে স্বাস্থ্য সেবকদের তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই তাঁর অবশিষ্ট সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, তিনি ত্বকের মেলানোমা ক্যান্সারের আক্রমণের জেরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যে রোগের প্রকোপে একধরনের টিউমার তাঁর লিভার এবং মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
ওয়াশিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে যে, কার্টারের শেষ ছবি তোলা হয়েছিল গত ১ অক্টোবর। যখন তিনি তাঁর ১০০ তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত একটি ফ্লাইওভার দেখছিলেন।
জানা গিয়েছে, জীবদ্দশায় জিমি কার্টার অনেক টুপি পরেছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি একজন ছোট শহরের চিনাবাদাম চাষী ছিলেন। পরে একজন মার্কিন নৌবাহিনীর প্রবীণ সৈনিক ছিলেন। ১৯৫৩-এর পরে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও জর্জিয়া প্রদেশের গভর্নর হন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ার গভর্নর ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ডিপ সাউথ থেকে প্রথম রাষ্ট্রপতি হন এবং লিন্ডন বি জনসন এবং বিল ক্লিনটনের হোয়াইট হাউসের মেয়াদের মধ্যে একমাত্র ডেমোক্র্যাট নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন আমেরিকাকে কূটনৈতিক ও আর্থিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছিলেন জিমি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে, কার্টারকে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য স্মরণ করা হয়। তিনি ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে চলমান যুদ্ধ থামাতেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। যার ফলে ১৯৬৭ সালে উল্লেখযোগ্য ছয় দিনের যুদ্ধে দখলকৃত অঞ্চল থেকে প্রথম ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
নোবেল পুরস্কার সংস্থার বিবৃতি অনুসারে, ‘আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গত কয়েক দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য’ কার্টারকে তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল শান্তি পুরষ্কারে সম্মানিত করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে পানামা খাল চুক্তিগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্টারের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, তাঁর আমলেই চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কেও নয়া দিক উন্মুক্ত হয়। কার্টার চীনকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন এবং মানবাধিকারকে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির একটি কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত করেন।