অবশেষে ছয়দিনের লন্ডন সফরের শেষ পর্যায়ে পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণের মাধ্যমে তাঁর ব্রিটেন সফরের কর্মসূচি সমাপ্তি। সেই লক্ষ্যে এদিন নির্দিষ্ট সময়ে লন্ডন থেকে অক্সফোর্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান বাংলার জননেত্রী। তবে তিনি গাড়িতে না গিয়ে বাসে চড়ে অক্সফোর্ড গেলেন। তাঁর এই বাস ভ্রমণের আরও একটি উদ্দেশ্য হল, সেখানকার মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। এভাবে লন্ডনের সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা খানেক আগেই অক্সফোর্ডে পৌঁছে যান।
তাঁর সঙ্গে ছিল নিজের লেখা বই ও নিজের আঁকা ছবি। এর আগে ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে সেখানে কর্তব্যরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকেও নিজের ছবি উপহার দেন। এবার অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। সেখানেও নিজের আঁকা ছবি ও বই উপহার দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
জানা গিয়েছে, লন্ডনের সেডান গাড়িগুলি অনেকটাই নিচু। সাধারণত দেশে তিনি সাদা রঙের এসইউভি গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করেন। এই ধরনের গাড়িতেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু সেডানে চড়ে যাতায়াতের অভ্যাস নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তাই বাসে চড়ে অক্সফোর্ড পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সঙ্গে বাসে ওঠেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ ও শিল্পপতি সত্যম রায় চৌধুরীও। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যান অন্য একটি গাড়িতে। অন্যান্য শিল্পপতিরাও গাড়িতে চড়ে অক্সফোর্ড পৌঁছন।
মমতা অক্সফোর্ডে পৌঁছনোর পর প্রথমে তাঁকে বিশ্রামের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এখানকার র্যানডল্ফ হোটেলে। সেখানে লবিতে রাখা একটি আকর্ষণীয় পিয়ানোর ওপর নজর পড়ে তাঁর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন ভারতীয় গবেষক। মমতা অনুমতি নিয়ে সেটি বাজাতে শুরু করেন। এই গ্র্যান্ড পিয়ানোটি ১৮৮৭ সালের একটি হেরিটেজ পিয়ানো। মুখ্যমন্ত্রী সেই পিয়ানোর রিডে সুর তোলেন ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ (আমরা করব জয়)। তার পর ‘পুরানো সেই দিনের কথা’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’।
এদিকে হলুদ ফুলের তোড়া নিয়ে হোটেলে মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন অক্সফোর্ডের গবেষক শাহনাওয়াজ আলি রায়হান। তিনি গত লোকসভা ভোটে মালদহ দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থীও ছিলেন। এরপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন মমতা। অক্সফোর্ডে বক্তৃতা ছাড়াও ইংল্যান্ডের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার-সহ নানা কিছু ঘুরে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টোয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারিদিক ঘুরিয়ে দেখান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মাইলফলকের সঙ্গে পরিচয়ও করানো হয়। নিয়ে যাওয়া হয় গ্রন্থাগারেও। এই সফরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম সঙ্গী ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন গান্ধী হলে মমতা যেখানে বসেছিলেন, তার ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিল মহাত্মা গান্ধীর একটি পূর্ণাবয়ব প্রতিকৃতি। সভার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী গান্ধীর ভারত দর্শনের কথা উল্লেখ করে তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন।
এদিন বিকেল সাড়ে ৫টা অর্থাৎ ভারতীয় সময় রাত ১১টা নাগাদ কেলগ কলেজ ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহ ‘দ্য হাব’-এ বক্তৃতা দেন তিনি। এরপর সেখানে উপস্থিত শ্রোতাদের সঙ্গে শুরু হয় আলাপচারিতা। পাশাপাশি অক্সফোর্ডে ভারত বিষয়ক ফ্যাকাল্টির ২৫ জন ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।