ফাঁস হয়ে গিয়েছে ইয়েমেনে মার্কিন হামলার পরিকল্পনা। জনপ্রিয় সমাজ মাধ্যমের একটি গোপন গ্রুপে মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ইয়েমেন হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলাকালীন ভুলবশত চ্যাটে যোগ করা হয় সাংবাদিক জেফ্রি গোল্ডবার্গকে। শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত সাংবাদিককে যুক্ত করে ফেলায় ফাঁস হয়ে যায় ইয়েমেনে মার্কিন হামলার পরিকল্পনা। সম্প্রতি এই দাবি করেছেন ওই সাংবাদিক। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া , তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
দ্য আটলান্টিক-এর মতে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ইয়েমেনে হুথি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা নিয়ে আলোচনার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফের সঙ্গে একটি গ্রুপ চ্যাট শুরু করেন। ছিলেন আমেরিকার আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে থাকা কর্তারা। ভুলবশত, ওয়াল্টজ আটলান্টিক-এর প্রধান সম্পাদক জেফ্রি গোল্ডবার্গকেও যোগ করে ফেলেন, যিনি পুরো আলোচনা জুড়ে চ্যাটে ছিলেন। সাংবাদিকের দাবি, গত ১৩ মার্চ আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এই গ্রুপ চ্যাটে অংশ নিয়েছিলেন। গ্রুপটির নাম ছিল ‘হুথি পিসি স্মল গ্রুপ’।
সিগন্যালের সেই গ্রুপ চ্যাটের বার্তাগুলিতে হামলার সময়, নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং মোতায়েন করা অস্ত্র সম্পর্কে অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য ছিল। হেগসেথ ইয়েমেনে হামলার বিবরণ, লক্ষ্যবস্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েন করা অস্ত্র এবং আক্রমণের ক্রম সম্পর্কে তথ্য ভাগ করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, র্যাটক্লিফও এমন কিছু তথ্য দিয়েছিলেন যা প্রকৃত অর্থে বর্তমান গোয়েন্দা অভিযানের সঙ্গে সম্পর্কিত। গোল্ডবার্গের দাবি, ইয়েমেনে সর্বশেষ হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই হেগসেথ ওই গ্রুপে ‘অভিযান’ সংক্রান্ত বিস্তারিত পরিকল্পনা শেয়ার করেছিলেন।
যদিও হেগসেথ এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। হাওয়াইয়ে এক সফরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কোনও যুদ্ধ পরিকল্পনা লিখে পাঠানো হয়নি। আমার এই বিষয়ে এর বেশি আর কিছু বলার নেই।’
তবে হোয়াইট হাউজ়ের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ জানিয়েছেন, যে গ্রুপ চ্যাটটি প্রকাশ্যে এসেছে, সেটি ভুয়ো নয়। তবে কীভাবে ওই গ্রুপে সাংবাদিককে যোগ করা হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্রায়ানের কথায়, ‘এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। কীভাবে ওই নম্বরটি গ্রুপে যোগ করা হল, আমরা তা পর্যালোচনা করে দেখছি।’
যদিও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজের দাবি, এই ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তায় কোনও প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে পশ্চিমের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একজন জোর দিয়ে বলেছেন যে, সিগন্যালের শক্তিশালী এনক্রিপশন থাকলেও এটি কখনওই সরকারী ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। ওই আধিকারিক বলেন, ‘শীর্ষ সরকারি পর্যায়ে নীতিগত আলোচনার কথা তো বাদই দিন, এটিকে কখনওই কার্যকরী তথ্যের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। এই ধরনের লঙ্ঘন আস্থার জায়গাকে প্রভাবিত করতে পারে।’
কিছু প্রাক্তন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে ঘটনাটি গুপ্তচরবৃত্তি আইনের লঙ্ঘন হতে পারে, যা জাতীয় প্রতিরক্ষা তথ্যের অপব্যবহার সংক্রান্ত অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
ট্রাম্প এই বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। দ্য আটলান্টিকের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।‘ ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, ‘আপনি প্রথমবার আমাকে এই বিষয়ে বলছেন।’
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এই বিষয়ে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্টকেও গোটা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।