আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফের হোয়াইট হাউসের দখল নিলেন তিনি। তাঁকে এই বিপুল জয় এনে দেওয়ার জন্য আমেরিকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘সমালোচকদের ভুল প্রমাণিত করে আমরা জয়ী। আমেরিকা অভূতপূর্ব এবং বলিষ্ঠ রায় দিয়েছে।’ এ দিন জয় নিশ্চিত হতেই পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টার থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা আমায় অপরিসীম ক্ষমতা দিয়েছে। এটা আমেরিকাবাসীর জয়।’
ফের ঝড়ের গতিতে জয় ছিনিয়ে নিলেন ট্রাম্প। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনার পর পেনসিলভেনিয়ায় জয়ী হন তিনি। পাঁচটি প্রদেশের ভোটগণনা বাকি থাকতেই জাদুসংখ্যা পেরিয়ে যান ট্রাম্প। উইসকনসিন প্রদেশের ফলপ্রকাশের পরই ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ পাওয়া খবরে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭৭ টি ভোটে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৪টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। জয় নিশ্চিত হতেই ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর পুরনো কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন মোদী। তিনি লেখেন, ‘চলুন একসঙ্গে কাজ করি!’ ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বার্তা দেন তিনি। একই সঙ্গে বিশ্বে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখতে একত্রে কাজ করার কথাও বলেন নরেন্দ্র মোদী।
মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যকাল শুরু করতে চলেছেন ট্রাম্প। ‘আমেরিকাকে আবার শ্রেষ্ঠ করব’ স্লোগান এদিনও শোনা যায় ট্রাম্পের বক্তৃতায়। তাঁর জয়ের আভাস স্পষ্ট হতেই ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বিজয়ী ভাষণ দেওয়ার জন্য সেজে ওঠে মঞ্চ।বুধবার ভারতীয় সময় ১ টা নাগাদ তিনি তাঁর প্রদেশ ফ্লোরিডার পাম বিচের কনভেনশন সেন্টারে পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া।
ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘এটা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জয়। আমেরিকাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই, আপনারা আপনাদের ৪৭ তম প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেছেন। আপনারাই আমায় ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। আমার শরীরের প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে আপনাদের জন্য লড়ব। আমার আপনার সন্তানরা এক শক্তিশালী, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ আমেরিকা পাওয়ার অধিকারী। যতক্ষণ না তা হচ্ছে ততক্ষণ আমি বিশ্রাম নেব না।’ ট্রাম্পের বক্তৃতা চলাকালীন সমর্থকেরা একটানা ‘আমেরিকা-আমেরিকা’ স্লোগান দিতে থাকেন। ট্রাম্প তখন সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সব সমস্যার সমাধান করব। আমরা আবার আমেরিকার স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনব। আমি আপনাদের নিরাশ করব না।’
একইসঙ্গে এদিন অনুপ্রবেশ নিয়েও এদিন স্পষ্ট বার্তা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এবার আমেরিকায় অনুপ্রবেশ বন্ধ হবেই।’ ভোট প্রচারের সময়ও আমেরিকায় অনুপ্রবেশ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। বুধবার বিজয়-ভাষণের মঞ্চ থেকেও ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সীমান্ত বন্ধ করব। অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হবে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কের ঝড় উঠলেও তাঁর বিজয়রথ থেমে থাকেনি। তাঁর প্রচার এবং নির্বাচনে জয়কে আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এই রকম আন্দোলন এর আগে কেউ কখনও দেখেনি। আমার বিশ্বাস, এটাই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক আন্দোলন।’ ট্রাম্প এদিন আরও বলেন, ‘এমন সব বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে এসেছি, যা অতিক্রম করা কারও পক্ষে কোনওদিন সম্ভব নয় বলেই মনে করা হয়েছিল। এটা সর্বকালের সেরা রাজনৈতিক সাফল্য।’ এদিন তাঁর বক্তৃতায় নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, ‘ঈশ্বর এই কারণেই আমার প্রাণ রক্ষা করেছে।’
ট্রাম্পের জয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি, শুভেচ্ছা জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি এদিন মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষে ভোট হয়। দীর্ঘ ৪ বছর পর কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ তথা সেনেটে ঐতিহাসিক জয় হল রিপাবলিকানদের। অন্যদিকে হাউস অফ রেপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সুহাস সুব্রহ্মণ্যম।