‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দ্বিচারিতার স্থান নেই’, ব্রিকস-এর মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা মোদীর

ব্রিকস সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলায় সব অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে ‘দৃঢ় সমর্থন’ -এর ডাক দিলেন মোদী। তিনি এদিন জোর দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্বিচারিতার কোন স্থান নেই। রাশিয়ায় আয়োজিত ১৬ তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী মোদী তরুণদের মধ্যে উগ্রপন্থা বন্ধ করতে ‘সক্রিয় পদক্ষেপ’ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন।বুধবার রাশিয়ার কাজানে  ব্রিকস সম্মেলনের মঞ্চে  ভ্লাদিমির পুতিন, শি জিনপিং, মাসুদ পেজেশকিয়ান-সহ ৩৬ জন রাষ্ট্রনেতা উপস্থিত ছিলেন।
 
ব্রিকস সম্মেলনের  মঞ্চ থেকে এদিন সন্ত্রাসে অর্থ যোগান নিয়েও সোচ্চার হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সদ্য খালিস্তান ইস্যুতে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে ফের শীতল বাতাবরণ তৈরী হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বলেন , ‘আমাদের  তরুণ সমাজকে সন্ত্রাসের পথ থেকে বিরত রাখতে সক্রিয় পদক্ষেপ করতে হবে।’  কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে,  চিনকে উদ্দেশ্য করেও মোদীর এই মন্তব্য। কারণ, গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে বেশ কয়েক জন পাক জঙ্গির বিরুদ্ধে ভারত প্রস্তাব আনলেও চিনের ভেটোর কারণে তা পাশ হতে পারেনি।
 
সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের মধ্যে ভারত-চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর।  পূর্ব লাদাখে সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করার লক্ষ্যে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনের মধ্যে মোদী এবং জিনপিংয়ের বৈঠকের পরে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল করে তুলতে এবং উন্নত করতে বিদেশমন্ত্রী এবং অন্যান্য আধিকারিক পর্যায়ে যে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, সেটাকে কাজে লাগানো হবে।’ বুধবারের বৈঠকের শুরুতেই সীমান্ত সংঘাত নিয়ে মুখ খোলেন মোদী। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ব লাদাখ সীমান্ত সংঘাত নিয়ে যে ভারত ও চিন যে ঐকমত্য পৌঁছেছে এবং সম্পূর্ণভাবে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে,তাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কোনও সংঘাত হলে তা সঠিক পথে সামলানোর উপর জোর দেন তিনি, যাতে তার কারণে শান্তি ব্যাহত না হয়।
 
ব্রিকসের ১৬ তম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বুধবার জিনপিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। গালওয়ান সংঘর্ষের পরে প্রথমবার বৈঠক হল  নরেন্দ্র মোদী এবং শি জিনপিং-এর। ২০১৯ সালের পর এই প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। 
 
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাতের আবহে সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মোদী বলেন,’ আমাদের বৈঠক এমন একটা সময় হয়েছে যখন বিশ্বকে ঘিরে রেখেছে যুদ্ধ, সংঘাত, আর্থিক অনিশ্চয়তা, আবহাওয়াগত পরিবর্তন ও সন্ত্রাসবাদ। বিশ্বে চর্চা চলছে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব- পশ্চিম ভাগাভাগি নিয়ে,  এবং প্রযুক্তির যুগে, সাইবার নিরাপত্তা, ডিপ ফেক, জিন ইফরমেশন নিয়ে নানান চ্যালেঞ্জ উঠে আসছে। এরকম পরিস্থিতিতে ব্রিকস থেকে বহু আশা রয়েছে।’  সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই-র অপব্যবহার এবং সাইবার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে আমাদের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’
 
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন,’ আমি বিশ্বাস করি যে একটি বৈচিত্র্যময় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্রিকস সব বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি জনগণকেন্দ্রিক থাকা উচিত। আমাদের বিশ্বকে এই বার্তা দেওয়া উচিত যে ব্রিকস একটি বিভাজনমূলক নয়, একটি জনস্বার্থ গোষ্ঠী।’ তাঁর বক্তব্যে মোদী, এই সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে আয়োজনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ  জানান। মোদী বলেন,’আমরা সংলাপ ও কূটনীতিকে সমর্থন করি, যুদ্ধকে নয়।’
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দেশে কিছু জরুরি কাজ থাকায় ব্রিকসের মূল সম্মেলন এবং কয়েকটি পার্শ্ববৈঠকে যোগ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বুধবারই  রাশিয়া থেকে ফেরার কথা। বৃহস্পতিবার শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিন ব্রিকস ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবে। ভারতের পক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।