সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে, সংরক্ষণ নিয়ে রায় দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট 

ঢাকা, ২১ জুলাই – সংরক্ষণ নিয়ে হাই কোর্টের রায় খারিজ করে দেওয়া হল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে। রবিবার বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের তরফে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়। পুরনো নিয়মেই ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। দেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে বলে রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। কীভাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে তার রূপরেখাও তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ আদালত। বলা হয়েছে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কেবল সাত শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৯৩ শতাংশ আসনেই নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। একইসঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে এতদিন ধরে যে ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে বলেছে আদালত। 

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, সে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন। তবে আগে তাঁরা ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ পেতেন। এই ৩০ শতাংশ থেকে কমে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ, এখন থেকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কেবল পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য। 

সাত শতাংশের মধ্যে বাকি দুই শতাংশ সংরক্ষণ থাকছে অন্যান্য শ্রেণির জন্য। অনগ্রসর শ্রেণি পাচ্ছে এক শতাংশ কোটা। এ ছাড়া বাকি এক শতাংশ কোটার সুবিধা পাবেন প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকেরা।


শুনানিতে সরকার পক্ষের আইজীবী আদালতে জানান, ২০১৮ সালে সংরক্ষণ নিয়ে সরকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাতে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। হাই কোর্টের রায়কে ‘স্ববিরোধী’ বলেও উল্লেখ করা হয়।

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। শুরুতে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। বাকি ৪৪ শতাংশে নিয়োগ হত মেধার ভিত্তিতে। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ।

শেখ হাসিনার সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সাত জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সেই মামলায় গত ৫ জুন হাই কোর্ট জানায় সরকারের সিদ্ধান্ত অবৈধ। আবার ফিরিয়ে আনা হয় আগের মতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনেরা ফের ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ পেতে শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের রায়ের পরেই বাংলাদেশ জুড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয় গত কয়েক দিনে যার ব্যাপ্তি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে।কোটা বা সংরক্ষণের বিরোধিতাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। পথে নেমে পড়ুয়ারা নিৰ্ভয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ ও সেনার বন্দুকের সামনে। পড়ুয়াদের এই আন্দোলন ক্রমশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১১৫ জনের। বাংলাদেশে শুক্রবার রাত থেকে কার্ফু চলছে , যা এখনও যা এখনও জারি রেখেছে সরকার। শুট অ্যাট সাইটেরও নির্দেশ দিয়েছে সরকার।পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনা। বন্ধ ইন্টারনেট, মেসেজ পরিষেবাও।

হাই কোর্টের রায়কে  চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আগেই গিয়েছিল হাসিনা সরকার। আগামী ৭ আগস্ট তার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের ক্রমবর্ধমান অশান্তির কারণে  শুনানি এগিয়ে আনা হয়। রবিবার সেই শুনানি হয়  বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে অংশ নেওয়া নয়জন আইনজীবীর মধ্যে আটজনই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করার পক্ষে মত দেন। একজন আইনজীবী কোটা সংস্কারের পক্ষে মতামত দেন।

শুনানি শেষের পর আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের প্রতিনিধি শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, “এটি এক ঐতিহাসিক রায়। সকলে এই রায় মেনে নিন। শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যান।” রায় অনুযায়ী দ্রুত সরকারকে বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।