• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

দ্য বার্নিং ট্রেন : পাকিস্তানে তেজগাম এক্সপ্রেসে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, মৃত্যুমিছিল

পাকিস্তান রেলওয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যে কোচে বিস্ফোরণটি ঘটেছে, সেটি তাবলীগ জামাতের এক সদস্য বুকিং করেছিলেন।

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

এ যেন চোখের সামনে ‘বার্নিং ট্রেন’-এর দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। করাচি থেকে লাহাের যাওয়ার পথে লিয়াকতপুরের রহিম ইয়ার খানের কাছে করাচি-রাওয়ালপিণ্ডি তেজগাম এক্সপ্রেসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে খবর।

দুর্ঘটনার মুহুর্ত সময় আগে ট্রেনে উপস্থিত এক যাত্রীর সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি তেজগাম থেকে রাওয়ালপিণ্ডিতে যাচ্ছিল। তখন তিনি একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। পরে জানতে পারেন এক যাত্রীর গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। যার থেকেই পাশে থাকা আরও দুটি স্টোভে আগুন লাগে। সেই স্টোভের তেল ছড়িয়ে পড়ে, যার জেরে ভয়াবহ রূপ নেয় আগুন।

পাকিস্তান রেলওয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যে কোচে বিস্ফোরণটি ঘটেছে, সেটি তাবলীগ জামাতের এক সদস্য বুকিং করেছিলেন। সকালের খাবার তৈরির সময়ে তিনি গ্যাস স্টোভে ডিম সিদ্ধ করতে গেলে, তখনই বিকট বিস্ফোরণে চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যে কামরা থেকে ট্রেনের বাইরে লাফিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। কিন্তু ট্রেনটি চলন্ত অবস্থায় থাকায় মুহর্তের মধ্যে পাশের আরও একটি কামরায় আগুন ছড়িয়ে যায়। পরে পাশের আরও একটি কামরা সহ মােট তিনটি কামরা চলে যায় আগুনের গ্রাসে।

জেলা পুলিশ কর্মকর্তা সর্দার মুহাম্মদ আমির তৈমুর খান প্রথমে নিহতের সংখ্যা ৪৬ উল্লেখ করলে, পরে ৬৫ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান। পাকিস্তানের রেলওয়েমন্ত্রী শেখ রশিধও এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার পরই দ্রুত উদ্ধার কাজে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশেষ উদ্ধারকারী দল। অগ্নিদগ্ধদের দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় লিয়াকতপুরের ডিএইচকিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও মুলতান থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

২০০৫ সালে সিন্ধ প্রদেশে দুটি ট্রেনের মুখােমুখি সংঘর্ষে ১৩০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। সূত্রের খবর, এদিন আচমকাই চলন্ত ট্রেনের তিনটি কামরায় আগুন লেগে যায়। প্রথমে তা টেরই পাননি চালক ও গার্ড। পরে রহিম ইয়ার খান শহরে ঢােকার মুখে তাদের ওই আগুন নজরে আসে। তখনই ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দাউদাউ করে আগুন জ্বলা অবস্থায় লাইন ধরে ছুটছিল ট্রেনটি। অনেককে চলন্ত ট্রেন থকে ঝাপ দিতেও দেখা গিয়েছে। অনুমান, আগুন আতঙ্কে লাফ দিয়েই মারা গিয়েছেন বেশীরভাগ যাত্রী। আরও জানা গিয়েছে, ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ার কিছু সময়েই মধ্যেই সেখানে আসে দমকল এবং সরকারি আধিকারিকরা। তাদের অনুমান, রান্নার জন্য ব্যবহৃত গ্যাসের ট্যাঙ্ক ফেটে গিয়ে বিস্ফোরণের ফলেই এই আগুন লেগেছিল।

দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ৬৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকার্য চলছে বলে খবর। উল্লেখ্য, তথ্য বলছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক সরঞ্জাম বা পরিকাঠামােগত উন্নয়ন হয়নি পাক রেলমন্ত্রক। ফলে তার প্রভাব পড়ছে ট্রেনেও। যার জেরেই এই ভয়াবহ ঘটনা।