শনিবার নেপালের হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ-র (প্রতিনিধি) সভার নিম্নকক্ষে পাশ হল নয়া মানচিত্র অনুমোদনের সংশোধনী বিল। এই বিলে উত্তরাখন্ডের তিন ভারতীয় এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে নয়াদিল্লির আপত্তি উড়িয়ে নেপালের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র অনুমোন দেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাশের জন্য নেপালের পার্লামেন্টে দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন জরুরি ছিল। এদিন সেই সমর্থন নিয়েই নেপাল পার্লামেন্টের নিন্মকক্ষে বিলটি পাশ হয়। নেপাল পার্লামেন্টের নিন্মকক্ষে ২৭৫ জন প্রতিনিধি সভার সদস্য রয়েছেন।
এদিন শাসক দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির পাশাপাশি এখানকার প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস এমনকী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয় নেপালি দলগুলিও এই বিলকে সমর্থন করেছে। বিলের পক্ষে পড়েছে ২৫৮ টি ভোট। বিতর্কের পর ভোটাভুটির মাধ্যমেই সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাশ হয়েছে বলে প্রতিনিধি সভার মুখপাত্র রোজনাথ পান্ডে জানিয়েছেন।
নেপালের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার আগে এদিন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নরবনে বলেছেন, ভারত ও নেপালের সম্পর্ক অতীতে ঘনিষ্ঠ ছিল। ভবিষ্যতেও সেই ধারা বজায় থাকবে। আমাদের ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে। পঞ্চাশের দশক থেকে ভারত এবং নেপাল সরকার দু’দেশের সেনাপ্রধানকেই নিজের দেশের ‘সাম্মানিক সেনাপ্রধান’ পদে নিযুক্ত করে।
উল্লেখ্য, গতবছর নেপালের সেনাপ্রধানকে ভারতীয় ফৌজের ‘সাম্মানিক জেনারেল পদ’ প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমান আবহে সেই প্রক্রিয়াও অনিশ্চয়তার মুখ পড়লো বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।
সামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের কাছে চিন অধিকৃত তিবৃত লাগোয়া পিথোরাগড় জেলার এই তিনটি অঞ্চল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৈলাশ ও মানস সরোবরের তীর্থযাত্রীরা বহু বছর ধরে লিপুলেক ব্যবহার করেন। মে মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দীর্ঘ ৮০ কিমি তাওয়াঘাট-লিপুলেক সড়কের উদ্বোধন করেছিলেন। এরপরেই নেপালের তৎপরতা শুরু হয়।
নেপালের আইন মন্ত্রি শিবমায়া তুহাম্পি ৩১ মে সে দেশের হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ-এ মানচিত্র বদলের খসড়া পেশ করেন। হাউসেরই এক সদস্য সরিতা গিরি নয়াবিলের বিরুদ্ধে একটি সংশোধনী প্রস্তাব জমা দেন। তাতে উত্তরাখন্ড সীমান্তের এই তিনটি বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ অগ্নিপ্রসাদ সাপকোটা নিজের অধিকার প্রয়োগ করে প্রস্তাবটি খারিজ করে দেন।
এরপর ৯ জুন প্রতিনিধি সবার অনুমোদন নিয়ে বিলটি বিতর্কের জন্য এবং সেই সঙ্গে ভোটাভুটির জন্য প্রস্তাব গ্রহনের অনুমোদন দেয়। শুক্রবার বিহারের সীতামঢ়ীতে নেপাল পুলিশের ভারতীয় কৃষকের মৃত্যুর ঘটনার পর সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই ঘটনায় কাঠমান্ডুর তীব্র সমালোচনা করা হয়। মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, ‘কৃত্রিমভাবে এলাকা বাড়িয়ে নেওয়ার এমন দাবি ভারত মানবে না। নেপালের এই আচরণ একতরফা এবং ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের বিপরীত।’