তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্প, মৃত বেড়ে ১০০

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল নেপাল-তিব্বত সীমান্ত। মঙ্গলবার ভোর ৬টা ৪০ নাগাদ কম্পন অনুভূত হয় উত্তরবঙ্গ, উত্তর বিহারের একাংশ-সহ দেশের অন্যান্য জায়গাতেও। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি এবং সিকিমে কম্পন অনুভূত হয়। কম্পন অনুভূত হয় কলকাতাতেও। জানা গিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎসস্থল তিব্বত। প্রায় ১ মিনিট ধরে কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের জেরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ১৩০ জনকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটার পর শুরু হয় উদ্ধারকাজ। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, তিব্বতের শিগাতসে শহরে রিখটার স্কেলে ৬.৮ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়েছে বলে দাবি করেছে চিন। শিগাতসে হল তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চিনা সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, শিগাতসের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে গত পাঁচ বছরে ৩ বা তার বেশি মাত্রার ২৯টি ভূমিকম্প হয়েছে। তবে মঙ্গলবার সকালের মতো তীব্রতা কোনোটিরই ছিল না। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শিগাতসের এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৮ লক্ষ মানুষ। ভূমিকম্পের উৎসস্থল তিব্বতের তিংরি প্রদেশে। এই অঞ্চলটিকে এভারেস্টের উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসাবে দেখা হয়।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎসস্থল নেপালের লবুচে থেকে ৯৩ কিলোমিটার দূরে শিজাংয়ে। সেখানে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.১। ফের ভূমিকম্প হয় তিব্বতের শিজাংয়ে।


দ্বিতীয় ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৪.৭। দুটি ভূমিকম্পই হয়েছে মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এরপর পর পর কম্পন অনুভূত হয়েছে ওই একই অঞ্চলে। এর পাঁচ মিনিট পরে আবার তৃতীয় কম্পন, সকাল ৭টা ৭মিনিটে। তৃতীয় কম্পনের তীব্রতা ছিল ৪.৯। তৃতীয় ভূমিকম্পটি হয় ৩০ কিলোমিটার গভীরে। এর ৬ মিনিট পরে আরও একটি কম্পন অনুভূত হয়, যার তীব্রতা ছিল ৫।

মঙ্গলবার সকালে নেপাল-তিব্বত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই ভূমিকম্পের জেরে রাজধানী দিল্লি থেকে শুরু করে বিহার এবং ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে টের পাওয়া যায় কম্পন। কম্পন অনুভূত হয়েছে কলকাতা-সহ বাংলার একাধিক জায়গায়। উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলেও মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভুটান এবং চিনের কিছু অঞ্চলেও কম্পন টের পাওয়া যায়।বিহারের পাটনা-সহ বেশ কিছু অঞ্চলে কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে বিহারের উত্তর দিকে নেপাল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কম্পন বেশি মাত্রায় অনুভূত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পের পর ৪০টিরও বেশি কম্পন হয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি কম্পনের মাত্রা ছিল ৩-এর বেশি। মঙ্গলবার সকালের এই ভূমিকম্পের জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মনে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর ভবন ভেঙে পড়েছে।

তিব্বতে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। সেখানেও কম্পন অনুভূত হয়। প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন কাঠমান্ডুর বাসিন্দারা। প্রভাব পড়েছে এভারেস্টের পাদদেশে অবস্থিত নেপালের সোলুখুম্বু জেলাতেও। সেখানকার মুখ্য জেলা আধিকারিক অনোজ রাজ ঘিমিরে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সোলুখুম্বুতে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে।