তালিবানরা আফগানিস্তান দখল করার পর, সাম্প্রতিককালে ভারতের সামনে একটি সংকটজনক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। এহেন গোলমেলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির প্রভাব কেবলমাত্র জম্মু-কাশ্মীর নয় অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজ্যতেও পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নজরদারিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কারণ পশ্চিমবঙ্গের একটি স্থান ‘চিকেন নেক’ যা ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ নামেও জনপ্রিয়। সেটা ভৌগলিক অবস্থানের জন্য চীনের খুবই নিকটে অবস্থিত এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি পয়েন্ট। ভারত এবং চীনের তিক্ত-মধুর সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ এবং সশস্ত্র বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সুকৌশলে সন্নিবেশ স্থানে নজর রাখছে কারণ ভারতের উত্তরের প্রতিবেশীর ‘চিকেন নেকে’র উপর প্রখর যুদ্ধ-কৌশল সম্বন্ধীয় আগ্রহ রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতের কাছে চীন একটি যথার্থ হুমকির মতন। কয়েক বছর আগে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং পরিদর্শন করতে এসেছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত, যা নিয়ে সৃষ্টি হয় একটি বিতর্কিত আলোচনা।
কোনরকমে যদি ‘শিলিগুড়ি করিডোর’কে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারত, ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ভূকৌশলগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেবলমাত্র ‘চিকেন নেকে’র কারণেই নয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বাংলাদশের সঙ্গে খুব দীর্ঘ সীমান্ত সীমানা ভাগ করে নেয়। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের আইএসআই বাংলাদেশের ভূমি এবং ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ ব্যবহার করে ইসলামপন্থী এবং জিহাদিদের দ্বারা ভারতে অশান্তি সৃষ্টি করছে এবং শুধু তাই নয় এই জায়গা থেকে খুব সহজে দিল্লি এমনকি অশান্ত কাশ্মীর পর্যন্ত খুবই সহজে যাওয়া যায়।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর দিল্লির সফর করেন এবং বেশ কয়েকজন বরিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি উত্তর পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর এবং তাদের দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে নানান বিপদ সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পাঠান। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যেহেতু রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম, তাই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণের সম্ভাবনা এখানে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে শাসনাধীন টিএমসি এবং বিজেপি অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ, তিক্ত বাকযুদ্ধে লিপ্ত, কখনো কখনো যা হিংসা বা প্রতিহিংসার রূপও নেয়। আর এই পরিস্থিতি জঙ্গিদের নাশকতার জন্য একটি উর্বর স্থান প্রদান করবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখেছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের আর এক বছরেরও কম সময় বাকি এবং ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে সেখানকার ধর্মীয় এবং বর্ণভিত্তিক সহিংসতা ইতিহাসের জন্য।
বেশ কয়েকটি দেওবন্দ (ইসলামী সেমিনারি) সাহায্যপ্রাপ্ত ও সমর্থিত গোষ্ঠী রয়েছে। যদিও তালিবানরা তা অস্বীকার করে, কিন্তু এটা যে আফগানিস্থানে আইএসআই এজেন্ডাকে প্রচার করছে তা সকলে জানে। কাবুলে তালিবান সরকারের আনুষ্ঠানিক গঠনে অংশ নিয়েছিলেন আইএসআই প্রধান। সম্ভবত আমাদের বিশ্বব্যাপী সমাজে এই প্রথম আইএসআই প্রধান তালিবানের আফগানিস্তানের সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ পেলেন। যা জামায়াত ছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীকে উৎসাহিত করেছে। যা নতুন জীবন দান করেছে আফগানিস্থানে অবস্থিত আরো অনেক গোষ্ঠীকে যেমন, ‘তালিবান রাজ’ , ‘আল কায়েদা’, ‘লস্কর-ই-তৈবা’, ‘জইশ-ই-মোহাম্মদ’ এবং জামায়াত মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)কে।
এখন পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মজলিস-উস-শুরা বেশ কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর আগস্ট,২০২১ থেকে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে। আইবির প্রেরিত ডিকোড বার্তাগুলির দ্বারা তাই জানা যাচ্ছে। নিম্ন আসাম, বরপেটা এবং ধুবরিতে বেশ কিছু গোপন বৈঠক হয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে কিছু জঙ্গিকে এই জঙ্গী সংগঠন আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এমনটাও জানা গেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এখন ভারত সরকার জঙ্গী সংগঠন গুলির কার্যকলাপ এর বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতেও বলেছে।