সোমবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলতে শোনা যায় ‘আগামী ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।’ তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দ্যেশে বলেন, দয়া করে হিংসা থেকে বিরত হন। প্রত্যেক মৃত্যুর, অঘটনের বিচার হবে। আপনারা আমার সঙ্গে থাকুন আমরা নিশ্চিত একটা সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হবে। সংঘাতের মাধ্যমে আমরা আর কিছু পাব না।’ তিনি আরো বলেন সেনা তরফে দেশের তিন রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামাত এবং জাতীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে এবং সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। এছাড়া তিনি এও ঘোষণা করেন সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে আদেশ দেওয়া হয়েছে কোনো গোলাগুলি যেন না হয়।
অন্যদিকে এদিনই এক বিরল চিত্র দেখা গেল বাংলাদেশের ইতিহাসে। যে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের অবদানে বাংলাদেশ স্বাধীন সেই মুজিবরের মূর্তির ওপর উঠে বিক্ষোভকারীদের সেই মূর্তি ভাঙতে দেখা গেল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভবনেও ভাংচুর চালাতে দেখা যায় বিক্ষুব্ধকারীদের।
বিক্ষোভ-প্রতিবাদের আগুনে ফুটছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফার দাবিতে কাতারে কাতারে মানুষ নেমেছেন পথে। গণ আন্দোলনর মুখে রাস্তা থেকে সরে গেল সেনাবাহিনীও। আন্দোলনকারীদের দখলে ঢাকার রাজপথ। এদিকে শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ইতিমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের দখলে।
তবে জানা গেছে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনার শাসন জারি করা হতে পারে। অসহযোগ আন্দোলনের আজ দ্বিতীয় দিন। সংরক্ষণ আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সুবিচার চেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফার দাবিতেই বিক্ষোভে পথে নেমেছে পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। রবিবারই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামি লিগ ও সেনার সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আজও নতুন করে সংঘর্ষ হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায়। এখন পর্যন্ত সংঘর্ষে মৃত্যু ৩০০ ছাড়িয়েছে বলেই খবর।
এদিকে, এ দিন সকালেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি তবে তারপর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বোনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ ও নীতি নির্ধারকদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন বলে সূত্রের খবর। অশান্তির আঁচ বাড়তেই আওয়ামি লিগের নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন।
ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহি নীর সঙ্গেও বৈঠক করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আপাতত সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর তরফে জনগণকে ধৈর্য্য ধরতে বলা হয়েছে। কিছুক্ষণের জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন সেনা প্রধান। জল্পনা শোনা যাচ্ছে, সেনার শাসন জারি করা হতে পারে। আপাতত কার্ফু জারি রয়েছে দেশে। বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট।
বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে জায়গায় জায়গায় খণ্ডযুদ্ধ বেঁধেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষে নাম জড়িয়েছে আওয়ামি লিগেরও। সংঘর্ষ, গুলি চালানোর ঘটনায় বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৯৮। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকারের তরফে ফের কার্ফু জারি করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।
সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। আজ একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি জায়গায়। গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের উপরে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাবনা, সিলেট, ফেণী, বগুড়া, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সহ একাধিক এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে সরকারকে সমর্থনকারী আওয়ামি লিগ ও পুলিশের সঙ্গে। ২০টি জেলা ও মহানগর মিলিয়ে আন্দোলনের প্রথম দিনেই কমপক্ষে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক মানুষ। ১৪ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যুর খবরও মিলেছে।
বাংলাদেশের তরফে জানা গিয়েছে, ৫০টিরও বেশি জেলায় হিংসা-সংঘর্ষ ছড়িয়েছে রবিবার। অধিকাংশ জায়গাতেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আন্দোলন বিরোধীদের সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনকারীদের অনেকের হাতেই পিস্তল, বন্দুক, রাইফেলের মতো আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাঠি, ধারল অস্ত্র ছিল। সরকারি নেতা-মন্ত্রীদের বাসভবনে হামলা ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, পুলিশের বিরুদ্ধেও আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, ছররা, রবার বুলেট ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে।
পড়শি দেশের এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ভারতও। ভারতীয় দূতাবাসের তরফে ওপার বাংলায় বসবাসকারী ভারতীয়দের সুরক্ষিত থাকতে বলা হয়েছে। পড়ুয়া ও অন্যান্যদের হাই কমিশনের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।