১ এপ্রিল – হামাসদের নিশ্চিহ্ন করতে গত ছয়মাস ধরে লাগাতার গাজায় তীব্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার পেরিয়েছে। এ হেন বিভীষিকাময় গাজায় জোট দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন পোপ ফ্রান্সিস। সেই সঙ্গে হামাসের হাতে বন্দি ইজরায়েলের নাগরিকদেরও দ্রুত মুক্তির জন্য বলেছেন তিনি। রবিবার ইস্টার সানডে উপলক্ষে এক ভাষণে গাজায় ইজরায়েলি সেনার অভিযানের কথা শোনা যায় পোপ ফ্রান্সিসের গলায়। মৃত্যু, ধ্বংস , পারস্পরিক হানাহানি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি গত দু’বছর ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াইয়েও এবার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস ।
ইস্টার সানডের রবিবারের অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, “গত ৭ অক্টোবর আটক ইজরায়েলি বন্দিদের দ্রুত মুক্তি ও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি আমি। আমরা শিশুদের চোখে অশান্তির ছায়া দেখতে পাচ্ছি। নিষ্পাপ এই শিশুরা হাসতেও ভুলে গিয়েছে। শিশুদের চোখের ভাষা আমাদের বলে দিচ্ছে যে তারা আমাদের প্রশ্ন করছে , চারিদিকে কেন এত মৃত্যু, কেন এত সর্বনাশ ? যুদ্ধ সবসময়ই অযৌক্তিক এবং সবার জন্যই পরাজয়।”
একদিকে গাজায় চলছে হামাস বনাম ইজরায়েলের যুদ্ধ। অন্যদিকে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অব্যাহত রাশিয়া-ইউক্রেনের লড়াই। সেখানেও মৃত্যু, রক্তাক্ত মানবসভ্যতা। এই মৃত্যু , যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছে তিনি।
সম্প্রতি আলোচনায় বসেছিল ইজরায়েল ও হামাস। কিন্তু যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পরিষ্কার কোনও সাড়া মেলেনি। এখনও ইজরায়েলি ও বিদেশি মিলিয়ে গাজায় পণবন্দি ১৩৪ জন। পণবন্দিদের আত্মীয়রা পথে নেমেছেন, তেল আভিভে রিং রোড অবরোধ করেছেন। জেরুজালেমেও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান কয়েকশো মানুষ । নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা।
এদিকে হামাসদের মুছে ফেলতে গত ছয় মাস ধরে গাজায় তীব্র আক্রমণ শানাচ্ছে ইজরায়েল। গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জেহাদিদের ডেরা। গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে একের পর হামাসের শীর্ষ নেতাকে খতম করেছে ইজরায়েলি ফৌজ। বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহের বাড়ি। এবার নাকি ধরা পড়েছেন হানিয়েহের বোন। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ইজরায়েলের পুলিশ।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, সোমবার ইজরায়েলের তেল শেভার বেদুইন গ্রাম থেকে হানিয়েহের বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদেশের প্রশাসন বিষয়টি সকলকে জানায়। কিন্তু ওই মহিলার নাম প্রকাশ্যে আনেনি ইজরায়েলি পুলিশ ও ইসরায়েল সিকিউরিটি এজেন্সি শিন বেট। কিন্তু একাধিক প্যালেস্তিনীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ধৃত মহিলার নাম জেবা আবদাল সালেম হানিয়েহ।
উল্লেখ্য, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহকে বহু দেশ হামাসের প্রধান হিসাবে গণ্য করে। নয়ের দশকের শেষ থেকে উত্থান শুরু হয় হানিয়েহর। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত এই জঙ্গি। ২০০৬ সালে প্যালেস্টাইনের প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচিত হয়। গত বছর নভেম্বরে তার বাড়িতে হামলা চালায় ইজরায়েলি ফৌজ।