গাজায় তিনদিনের যুদ্ধবিরতি। শিশুদের পোলিও টিকাকরণের জন্য এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি, এমনটাই জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, রবিবার থেকে এই টিকাকরণ কর্মসূচী শুরু হবে গাজায়, চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। তবে প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে সময় ।এই তিন দিন স্থানীয় সময় ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ৩ টে পর্যন্ত কোনওরকম আক্রমণ চালাবে না হামাস বা ইজরায়েল কোন পক্ষই। প্রথম দফায় ৬ লক্ষ ৪০ হাজার শিশুকে পোলিও-র টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। ইজরায়েলের লাগাতার আক্রমণ অব্যাহত। ইতিমধ্যেই এই যুদ্ধের পরিণামে গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। বেহাল অবস্থা শরণার্থী শিবিরগুলোর। অপরিচ্ছন্ন শিবিরগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। প্রাত্যহিক কাজকর্মের জন্য নেই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। অপুষ্টিতে ধুঁকছে শিশুরা। বাড়ছে নানা রোগের সংক্রমণ। মাথাচাড়া দিয়েছে পোলিও।এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে পোলিও নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে খবর,, গাজার বিভিন্ন নালা বা নিকাশী ব্যবস্থা থেকে নেওয়া নমুনায় পোলিও-র উপস্থিতি মিলেছে। পোলিও সংক্রমণের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে অনেকের শরীরে। গত ২৩ আগস্ট ‘হু’ জানায়, টাইপ টু পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একটি শিশু পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এর পরই গাজায় শিশুদের টিকাকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
পোলিওর টিকাকরণ প্রথমে শুরু হবে মধ্য গাজায়। তার পর দক্ষিণ গাজায়, এবং সবশেষে টিকাকরণ হবে উত্তর গাজায়। যখন যে অঞ্চলে টিকাকরণ চলবে, সেখানে তিন দিন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে।হু-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গাজাকে তিনটি বা চারটি অঞ্চলে ভাগ করে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আক্রমণ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সম্মত হয়েছে যুযুধান দুই পক্ষই। হু-এর অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক রিক পিপারকর্ন জানিয়েছেন, এই সময়ে কোনও পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা চালাবে না। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ তিন থেকে চার দিন হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি হামাস বা ইজরায়েল কোন পক্ষই ।
টীকাকরণ কর্মসূচী নিয়ে হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ শিশুর জীবন সুরক্ষিত করতে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।” শিশুদের জন্য এই কাজে সম্মত হয়েছে ইজরায়েলও। তারা জানিয়েছে, “যে জায়গাগুলোতে টিকা দেওয়া হবে সেখানে সাধারণ মানুষদের ঠিকমতো পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।”
টিকাকরণ কর্মসূচি প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট এলাকার ৯০ শতাংশ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোবে হু। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে পোলিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ পোলিওর মতো রোগ ছড়িয়ে পড়লে গোটা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়তে পারে।