বাংলাদেশে হিন্দুরা সুরক্ষিত রয়েছে, মোদিকে আশ্বস্ত করলেন ইউনূস

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য পরামর্শদাতা মহম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে মোদিকে আশ্বস্ত করেছেন ইউনূস। প্রধানমন্ত্রী মোদি এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে।

এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য পরামর্শদাতা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে কথা হয়েছে। গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। বাংলাদেশে হিন্দু ও সকল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার আশ্বাস দেন ইউনূস।

স্বাধীনতা দিবসে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৪০ কোটি ভারতীয় ‘অশান্ত’ বাংলাদেশে থাকা হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। তার প্রেক্ষিতেই মোদির এই মন্তব্য।


প্রসঙ্গত, ৫ অগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ছেড়ে তিনি আপাতত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সে-দেশে হামলার শিকার হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় পাশাপাশি গণহত্যারও অভিযোগ উঠেছে।

রবিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে এই বিষয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে লেখা হয়, দেশের কোথাও কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি উদ্বেগজনক। শুধু তাই নয়, সরকারের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনও দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।

এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটেছে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের হিন্দু-সংখ্যালঘুদের নিয়ে চিন্তিত ১৪০ কোটি ভারতীয়। তাঁরা চাইছেন, সেদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত হোক।

মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরও হিংসার শিকার হয়েছেন হিন্দুরা। মন্দির সহ হিন্দুদের ধর্মীয় স্থানের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদে পথে নেমেছে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি বিক্ষোভ প্রদর্শনও হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে।

হিন্দুদের উপর হামলা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, কানাডার মতো দেশও। গোটা পরিস্থিতির উপর প্রথম থেকেই নজর রেখেছিল নয়াদিল্লি। অবশেষে ১৫ অগস্টের ভাষণে এনিয়ে মুখ খোলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউনূস ফোন করে আশ্বস্ত করলেন তাঁকে।

এর আগেই অবশ্য ইউনূস হিংসা থামানোর বার্তা দিয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সকলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরুন। সরকারের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। একটু ধৈর্য ধরে দেখুন সরকার কী করতে পারে। আমরা ভুল করলে নিশ্চয়ই সমালোচনা করবেন, কিন্তু আগে কিছু করতে তো দিন!

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য পরামর্শদাতা মহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ঐক্য সভা, মহানগর পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের‌ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।

১৫ অগস্টের ভাষণে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তাও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত সবসময় চায় আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলো সমৃদ্ধি ও শান্তির পথে হাঁটুক। তাদের শান্তির জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রত সবসময় চায় আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলো সমৃদ্ধি ও শান্তির পথে হাঁটুক। তাদের শান্তির জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দিনকয়েক আগে মুখ খোলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নি সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমন কি অন্তঃসত্তা নারী, পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মী , পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি।