মোডানা বায়োটেক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরে মানব শরীরে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করল আমেরিকার ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট ফাইজার। সোমবার প্রথম একজনের শরীরে আরএনএ ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হয়েছে। বুধবার থেকে ৩৬০ জনের উপর এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
জার্মান বায়োটেকনোলজি ফার্ম বায়োএনটেক এসইর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই ভ্যাকসিনের ডিজাইন ও ট্রায়াল করছে ফাইজার। বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ম্যানহাটানের নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিন ও বাল্টিমোরের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনে এই ভ্যাকসিনের গবেষণা ও ট্রায়াল চলছে।
ফাইজারে চিফ একজিকিউটিভ অফিসার অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন, খুব কম সময়ের মধ্যেই এই আরএনএ ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট বানানো হয়েছে। মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন ভালভাবেই কাজ করবে আশা করছি। ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক উগার সাহি। তিনি বলেছেন BNT 162 আসলে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট। ল্যাবরেটরিতে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল। এবার মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের।
এই পরীক্ষা সফল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সংক্রমণের ঝুঁকি যাদের সবচেয়ে বেশি তেমন মানুষজনের উপরে ট্রায়াল শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালও যদি সফল হয়, তাহলেই ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি সাপেক্ষে তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রামিত রোগীদের উপরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে।
বয়স্কদের শরীরেও এই ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে ফাইজার। ট্রায়ালের রেজাল্ট সন্তোষজনক হলে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদেরও এই আরএনএ ভ্যাকসিন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ফাইজারের গবেষকরা। এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট হল ভ্যাকসিন তৈরির মূল ভিত। যেখানে হয় গোটা ভাইরাসকে (নিষ্ক্রিয়) শরীরে ঢুকিয়ে অ্যান্ডিবডি তৈরির চেষ্টা চলে, নাহলে ভাইরাসের সারফেস প্রোটিনগুলোকে বিশেষ উপায় বিশুদ্ধ করে মানুষের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়।
এই ভাইরাল প্রোটিনগুলো ‘মেমরি বি সেল’ তৈরি করে, যার কাজ শরীরকে ভালভাবে ভাইরাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে রাখা। এই মেমরি বি সেল ভাইরাল প্রোটিনের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করে রাখে। এই প্রক্রিয়াকে বলে অ্যান্টিবডি বেসড ইমিউন রেসপন্স বা অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করা। অর্থাৎ বাইরে থেকে প্যাথোজেন বা ভাইরাল প্রোটিন ঢুকিয়ে দেহকোষকে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে উদ্দীপিত করা।
পাশাপাশি এমন ক্ষতিকর ভাইরাল প্রোটিনগুলোকে চিনিয়ে রাখা, যাতে ভবিষ্যতে এমন মারণ ভাইরাসের প্রোটিন দেখলে দেহকোষ নিজে থেকেই সতর্ক হয়ে যেতে পারে। আর তাকে আটকানোর জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে।
ফাইজারে ভ্যাকসিন রিসার্চ বিভাগের প্রধান ক্যাথরিন জ্যানসেন বলেছেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে আরএনএ টেকনোলজির প্রয়োগ করছে অনেক বায়োটেক সংস্থাই। এই আরএনএ ভ্যাকসিন দেহকোষকে ভাইরাল প্রোটিন তৈরিতে বাধ্য করে যাতে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শরীরেই তৈরি হয়ে যায়।
আমেরিকার একাধিক বায়োটেক ফার্ম ও ফার্মাসিউটিক্যালস কোভিড ভ্যাকসিনের গবেষণা চালাচ্ছে। যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মোডানা বায়োটেকনোলজি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তত্ত্বাবধানে এই আরএনএ টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে এমআরএনএ-১২৭৩ (mRNA-1273) ভ্যাকসিন তৈরি করেছে মোডানা বায়োটেকনোলজি ফার্মও। প্রথম সেই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে।
তা ছাড়া রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন, ক্যানসিনো বায়োলজি। গিলেড সায়েন্সেস অ্যান্টি-ভাইরাল রেমডেসিভির ড্রাগের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালাচ্ছে। বেজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ও ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালসও ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের গবেষণা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
কন্ট্রোলড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হচ্ছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম দু’জনের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়েছে ভ্যাকসিন। তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা বিজ্ঞানী। নাম এলিসা গ্রানাটো। আরও ৮০০ জনকে দু’টি দলে ভাগ করে ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে।