বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসীর ওপর নিপীড়ন গ্রহণযোগ্য নয়ঃ বব ব্ল্যাকম্যান

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারির মতো বিষয়গুলি উঠল ব্রিটিশ সংসদেও। কনজারভেটিভ পার্টির সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান ব্রিটিশ সংসদে বাংলাদেশ ইস্যুতে সরব হন। চিন্ময়কৃষ্ণ এবং ইসকন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে অবস্থান নিয়েছে তার বিরোধিতাও করেছেন সাংসদ  বব ব্ল্যাকম্যান। ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি। কোনও দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার সমর্থনযোগ্য নয় বলে সংসদে উল্লেখ করেন ওই ব্রিটিশ সাংসদ। উল্লেখ্য, বুধবারই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক রিপোর্ট পেশ করেছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্স-এর ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর দ্য কমনওয়েলথ’। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘নতুন জমানায় বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার বদলা নিতে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছে। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার এই সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।’ ইতিমধ্যেই এই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে।
 
বাংলাদেশে হিন্দুদের নৃশংস আক্রমণ এবং হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। তিনি বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন সমর্থনযোগ্য নয়। এই বিষয়গুলির দিকে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিরোধীরা। ব্ল্যাকম্যান ব্রিটেনের ইসকন মন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির পরিচালনা করে ইসকন। তাদের ধর্মীয় নেতা বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন।’ সারা বিশ্বেই ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
 
বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে ব্ল্যাকম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে যেভাবে হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে, জেলে ভরা হয়েছে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে, সেসবের তীব্র নিন্দা করছি। ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে চেয়ে বাংলাদেশের হাই কোর্টে যেভাবে মামলা দায়ের হয়েছে, সেটাও যথেষ্ট উদ্বেগের। বিশ্বের সমস্ত দেশেই ধর্মপালনের স্বাধীনতা থাকা উচিত।’ ববের মতে, বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত ব্রিটেনের। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ব্রিটেনেরও ভূমিকা ছিল।
ঋষি সুনাকের দলের সাংসদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যা করে তাঁদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্দির। বাংলাদেশ সরকারে যাই পরিবর্তন হয়ে থাক না কেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর এমন নির্যাতন মোটেই বরদাস্ত করা যায় না।’ কনজারভেটিভ সাংসদের দাবি, ব্রিটিশ সংসদে মৌখিক বিবৃতি দিতে হবে বিদেশ এবং কমনওয়েলথ উন্নয়ন দপ্তরকে। তাহলেই গোটা বিশ্বের নজরে আসবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অসহায় পরিস্থিতির ছবি।
 
বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথাও সংসদে তোলেন তিনি। ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে চেয়ে বাংলাদেশের হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে ‘ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন’ বলে উল্লেখ করেছে। ব্রিটেনের সংসদে সেই প্রসঙ্গ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। লেবার পার্টি পরিচালিত ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা। সংসদে এই  প্রসঙ্গ উঠলেও ব্রিটিশ সরকারের তরফে বাংলাদেশ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গত সোমবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামের আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজও  করে দেয়। তার পর থেকেই তাঁর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে । চট্টগ্রাম, রংপুর বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার তাঁদের সংঘর্ষও হয়েছে। এর মধ্যেই হাই কোর্টে ইসকনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা খারিজ হয়ে যায়। ইসকনের তরফে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছিল, চিন্ময়কৃষ্ণ তাদের প্রতিনিধি নন। শুক্রবার আবার তারা অবস্থান বদল করে এই ধর্মীয় নেতার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
চিন্ময়ের গ্রেপ্তারি এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি করেছে। বিদেশ মন্ত্রক চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারি ও জামিন নামঞ্জুরের বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
 
এদিকে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছেন এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন। পাশাপাশি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমস্ত সম্প্রদায়ের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর দল আওয়ামী লীগ সমালোচনা করে বলেছে যে,  সংখ্যালঘুদের বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ এবং সুরক্ষার অধিকার ‘সম্পূর্ণভাবে পদদলিত’ হয়েছে।