বালুচিস্তানের বোলানে রাতভর চলেছে পাক সেনার উদ্ধার অভিযান। বহুক্ষণের চেষ্টায় অপহৃত জাফর এক্সপ্রেস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ১৫০ জন যাত্রীকে। গুলির লড়াইয়ে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পাক সেনার। তবে ট্রেনে আরও কতজন যাত্রী পণবন্দি রয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তাদের সদস্যদের মৃত্যুর খবর অস্বীকার করেছে বিএলএ। ১৬ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে বলে সেনার যে দাবি করেছিল তা খারিজ করে দিয়েছে বালুচ বিদ্রোহীরা। স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, তাঁদের কোনও সদস্যের মৃত্যু হয়নি। মিথ্যা দাবি করেছে পাক সেনা। পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার চরমসীমা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তান সরকারকে। দাবি না মানলে আরও ১০ পণবন্দিকে হত্যা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বালুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী জাফার এক্সপ্রেস। পাক সেনাকর্মী থেকে শুরু করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেই ছিলেন ওই ট্রেনে।পথে জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাক করে যাত্রীদের পণবন্দি করেছিল বিএলএ জঙ্গিরা। এক বিবৃতিতে বিএলএ জানিয়েছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধরা বোলানে রেলপথ উড়িয়ে দিয়েছে। যার জেরে ট্রেনটি থামতে বাধ্য হয়। তারপরই ট্রেনের দখল নিয়েছে তারা। পণবন্দিদের উদ্ধারে সেনা অভিযান হলে যাত্রীদের খুন করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বিএলএ।
বিএলএ হুঁশিয়ারি দিলেও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী পণবন্দি যাত্রীদের উদ্ধারে নামে। বিএলএ-র বিদ্রোহীদের সঙ্গে রাতভর গুলির লড়াই চলেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে ট্রেনের মধ্যে মোট ৪৫০ জন যাত্রীর মধ্যে ১৫০ জন পণবন্দিকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৭৮ যাত্রীকে বুধবার ভোরে বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ৪২ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কোয়েটার কাছে মাচ শহরে। আর আহত ৩০ জন যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ৯৩ জন পুরুষ। রয়েছেন ৪৭ জন মহিলা এবং ২০ জন শিশুও। মহিলা এবং শিশুদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করতে চাইছে বালোচ বিদ্রোহীরা। ফলে উদ্ধারকারী দল চেষ্টা করেও বিদ্রোহীদের নিকেশ করতে পারছেন না। সবমিলিয়ে বালোচিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাক হওয়ার পর একদিন কেটে গেলেও পণবন্দিদের সকলকে উদ্ধার করা যায়নি।
উদ্ধার হওয়া পণবন্দিরা এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাফর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী জানিয়েছেন, ‘জঙ্গিরা সকলের আইডি কার্ড যাচাই করছিল। যারাই অন্য প্রদেশের বাসিন্দা, তাদের গুলি করছিল।’ অন্য এক যাত্রী জানিয়েছেন, ‘জঙ্গিরা এসে পুরুষ ও নারীদের আলাদা করে দেয়। তবে আমি হার্ট পেশেন্ট বলায় ওরা আমায় ও আমার পরিবারকে যেতে দিল।’ জঙ্গিরা প্রাণে না মারলেও, লোকালয়ে পৌঁছতে কালঘাম ছুটে যায় যাত্রীদের। পাহাড়ি রাস্তার মধ্যে দিয়ে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে আসতে হয়েছে সবচেয়ে কাছের স্টেশনে। ফলে এখনও আতঙ্ক গ্রাস করছে যাত্রীদের।