• facebook
  • twitter
Saturday, 28 December, 2024

৭১-এর নারকীয় গণহত্যার ৫৩ বছর পর ফের বাংলাদেশে ঢুকছে পাক সেনা

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দীর্ঘদিনের সুপ্ত বাসনা রয়েছে পাকিস্তানের। যাতে ভারতকে দুর্বল করে দেওয়া যায়। এমনটাই ধারনা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।

নিজস্ব গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফের ৭১-এর ছায়া ফিরে আসতে চলেছে। এমনই আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল। একসময়ে যে পাকিস্তান সেনা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছিল, খুন করা হয়েছিল ৩০ লক্ষ বাঙালিকে, এর পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’; সেই পাক সেনাকে দেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আহবান জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য।

তাদের উর্দিতে ৭১-এর রক্তের দাগ লেগে থাকলেও বর্তমান সরকারের কাছে তারা অচ্ছুৎ নয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে কপালে বলিরেখা দেখা দিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। যদি পাক ফৌজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তাহলে উত্তর-পশ্চিমের জম্মু কাশ্মীর সীমান্তের মতো উত্তর-পূর্ব ভারতেও হামলা, জঙ্গি মদত সহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসে মদত জোগাবে সে বিষয়টি নিশ্চিত। আগামী দিনে বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় সহ একাধিক রাজ্যে জঙ্গি নাশকতাও বেড়ে যাওয়ার ঘোরতর আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।

ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বরাবরই পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা এবং ভারতের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সূত্রের খবর, হাসিনার পতনের পিছনেও পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চক্রান্ত চলছিল। ফলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাকিস্তানের মধুচন্দ্রিমা শুরু হয়েছে ৫ আগস্টের অনেক আগে থেকেই। তখন থেকেই পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, কিভাবে হাসিনার পতন ঘটানো যাবে। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দপ্তরের জন্য পদ্মাপারের দরজা খুলে দিলেন।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, মেজর জেনারেল পদমর্যাদার পাক সেনা অফিসার বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবেন। সেজন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ-খুলনা-কুমিল্লায় আসছে পাক সেনা। এই প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হবে আগামী ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে রয়েছে ‘ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কম্যান্ড’-এর সদর দপ্তর। সেজন্য প্রথম পর্যায়ে এখানেই পাক সেনাদের দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। সেজন্য ধাপে ধাপে এই প্রশিক্ষণ চলবে। এই মুহূর্তে মোট ১০টি কম্যান্ড রয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে। প্রায় এক বছর ধরে প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ পর্ব চলবে। এরপর ধাপে ধাপে প্রতিটি কম্যান্ডেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে পাক নৌসেনার সঙ্গে যৌথ মহড়ায় যোগ দিয়েছে বাংলাদেশের নৌবাহিনী। করাচি বন্দরে এই মহড়া হয়। যার পোশাকি নাম ‘আমন ২০২৫’। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে করছেন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। অথচ ক্ষমতায় থাকাকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও যৌথ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি ইসলামাবাদের যুদ্ধজাহাজ ‘তৈমুর’ কিছুক্ষণের জন্য বাংলাদেশের বন্দরে নোঙর করার অনুমতি পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছিল হাসিনা সরকার।

কিন্তু পাক সেনাকে দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই পরিকল্পনা কার মাথায় প্রথম আসে? খবরে প্রকাশ, গত নভেম্বরে প্রথম এই প্রস্তাব দেন পাক ফৌজের জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল শাহির সামশেদ মির্জ়া। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জামান সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানান। তিনিই পাক সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ আগের তুলনায় তিনগুণ গোলাবারুদ আমদানি শুরু করেছে। আর এই বিপুল পরিমাণ গোলা বারুদ আমদানি শুরু হয়েছে পাকিস্তান থেকে। শুধুমাত্র এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ হাজার রাউন্ড বুলেট আমদানি করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যা ২০২৩ সালে এই গোলা-বারুদ আমদানির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার রাউন্ড। রাইফেলের গুলির পাশাপাশি এবার আমদানির তালিকায় যুক্ত হয়েছে দু’হাজার রাউন্ড ট্যাঙ্কের গোলা এবং ৪০ টন আরডিএক্স।

শুধু তাই নয়, সম্প্রতি পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে ব্যাপক সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি মুহূর্তে কট্টরপন্থীদের ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে তারা। উদ্দেশ্য, শিলিগুড়ি করিডোর দখল করে ভারতকে দুই টুকরো করে দেওয়া। পাক সেনাবাহিনী উত্তর-পূর্ব ভারতকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করতে বাংলাদেশকে দাবার বোড়ের মতো ব্যবহার করছে। কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দীর্ঘদিনের সুপ্ত বাসনা রয়েছে পাকিস্তানের। যাতে ভারতকে দুর্বল করে দেওয়া যায়। এমনটাই ধারনা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।