• facebook
  • twitter
Tuesday, 25 March, 2025

স্পেসএক্স-এর সতীর্থদের উষ্ণ আলিঙ্গন সুনীতা-ও বুচের

এবার পৃথিবীতে ফেরার পালা

ফাইল চিত্র

দীর্ঘ ৯ মাস মহাকাশে কাটানোর পর এবার ঘরে ফেরার প্রস্তুতি সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর-এর। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই দীর্ঘ সময় আটকে থাকা দুই মহাকাশচারীকে পৃথিবীতে ফেরাতে শনিবারই রওনা হয়ে যায় ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স-এর মহাকাশযান। মহাকাশ স্টেশনে রবিবার সকালে পৌঁছেছিল স্পেসএক্স-এর যান। সোমবার ভোরেই তাঁদের পৃথিবীতে অবতরণের সময় প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। পাশাপাশি সোমবার সকাল থেকে এই অবতরণ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ অংশ সরাসরি সম্প্রচারও শুরু করে দিয়েছে নাসা। নাসার বিবৃতি অনুযায়ী, স্থানীয় সময় হিসেবে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আমেরিকার ফ্লরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। সেই সময় ভারতের ঘড়িতে বাজবে বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে।
 
এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভশ্চর সুনীতা উইলিয়াম্‌স ও তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোরকে। তবে প্রতিবারই তা কোনও না কোন কারণে ব্যর্থ হয়েছে। গ্রিনিচ মিন টাইম অনুযায়ী রবিবার ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে চার মহাকাশচারী আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছন। ভারতীয় সময় অনুসারে তখন রবিবার সকাল ১১টা বেজে ১৫ মিনিট। তাঁদের স্বাগত জানান সুনীতা ও তাঁর সহযাত্রী। মহাকাশ থেকে ভিডিওবার্তাও পাঠিয়েছেন সুনীতারা। ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাস্ক এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সুনীতার কথা শুনে মনে হয়েছে, পৃথিবীতে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
 
সুনীতা এবং তাঁর সহযাত্রী বুচ উইলমোর-এর ভিডিওবার্তা সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন মাস্ক নিজেই। ২৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওবার্তায় সুনীতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমরা খুব দ্রুত ফিরছি। বেশি দেরি নেই। আমাকে ছাড়া কোনও পরিকল্পনা করবেন না। আমরা ফিরছি।’ বুচ বলেন, ‘মাস্ক এবং আমাদের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা ওঁদের সম্মান জানাই। ওঁরা আমাদের জন্য যা করেছেন, আমরা তাতে কৃতজ্ঞ।’
 
তবে এই সুখবর ও আনন্দবার্তার মধ্যেও আশঙ্কার মেঘ থেকেই যাচ্ছে। সবার মনেই প্রশ্ন, পৃথিবীতে সুস্থভাবে ফিরতে পারবেন তো এই দুই নভশ্চর ? সফল হবে তো তাঁদের এতদিনের লড়াই ?  
 
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন,  এই দুই নভশ্চরকে পৃথিবীতে ফেরানোর ক্ষেত্রে কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়া হবে না। বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশ যানের অবস্থা, পুনরুদ্ধার দলের প্রস্তুতি, আবহাওয়ার পরিস্থিতি, সমুদ্রের গতিপ্রকৃতি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিবেচনা করে দেখবেন বিজ্ঞানীরা। এর কোনওটির ক্ষেত্রে কোনওরকম হেরফের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই দুই নভশ্চরের ফেরার পথে। ফলে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত হলেও ফের বদলে যেতে পারে সুনীতাদের ফেরার দিনক্ষণ। এমনটাই জানাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। 
 
বিজ্ঞানীরা আরও জানাচ্ছেন, পৃথিবীতে ফিরে আসার পরও রয়েছে অনেক লড়াই। কারণ এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার কারণে, অবতরণের পর দেখা দিতে পারে নানা রকম শারীরিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে রয়েছেন তাঁরা। ফলে তাঁদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় নানা ধরণের বদল ঘটেছে। মহাকাশের ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’, শরীরের  ভিতরের জলীয় অংশ ও রক্তচাপের উপর নানা প্রভাব ফেলে। এর ফলে মস্তিষ্কে তরল জমা হতে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমে যায়। কমে যায় শরীরের ওজন। এর পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ভাসমান অবস্থায় থাকার ফলে পা মাটির সংস্পর্শে না আসায় পায়ের তলা শিশুদের মতো নরম হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘বেবি ফিট’।  ফলে পৃথিবীতে ফেরার পর প্রথম কয়েক দিন হাঁটা চলায় সমস্যা হতে পারে নভশ্চরদের। 
 
স্পেসএক্স-এর মহাকাশযান ক্রিউ-১০ পৌঁছেছে মহাকাশ স্টেশনে। মহাকাশযানটিতে রয়েছেন চার মহাকাশচারী – আমেরিকার অ্যান ম্যাকক্লেইন এবং নিকোল আয়ার্স, জাপান অ্যারেস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মহাকাশচারী তাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার মহাকাশচারী কিরিল পেসকভ। নাসার স্পেস সেন্টারের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, ইসন মাস্কের মহাকাশযান আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছতেই ক্রিউ-১০ এর দরজা খুলে যায়। তারপরেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন চার মহাকাশচারী। মতীর্থদের বুকে জড়িয়ে ধরেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর। তাঁদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পৃথিবীতে ফিরবেন সুনীতারা। আগামী কিছু দিনের জন্য মহাকাশ স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে ওই চার মহাকাশচারীর উপর। সুনীতা এবং বুচের সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরবেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজান্ডার গর্বুনভও। ।  

সোমবার ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ থেকেই সুনীতাদের অবতরণ প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। সেই সময় তাঁদের মহাকাশযানটির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয়েছে মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়া বেশ কিছুটা সময়সাপেক্ষ। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই শুরু হবে অবতরণ। দুই লড়াকু নভশ্চরের পৃথিবীতে ফেরার মুহূর্তটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।