অজিত কৃষ্ণ দে
বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু
কত-না অজানা জীব ,কত-না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে৷ বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ৷
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে –
যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বানী
কুড়াইয়া আনি৷
জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষাল্ব্ধ ধনে৷
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভ্রমণ পিপাসু আমরা৷ কিছুদিন ধরে বিদেশে যাবার একটা পরিকল্পনা মাথায় ঘুরঘুর করছিল৷ পাসপোর্ট ২০১৩ সালে হয়ে গিয়েছিল৷ সেইসময় অর্থাৎ ২০১৪ সালে পুজোর সময়টা আমেরিকায় ঘুরে এলাম৷ নিউজার্সির বে অন শহরে পাকা চারমাস টু্যরিস্ট ভিসায় কাটিয়ে এলাম৷
আটলান্টিক সাগর পার করে এবারও চলে এলাম কানাডায়৷ আমেরিকার অপর প্রান্তে কানাডা৷ সেই কানাডার ভ্রমণ বৃত্তান্তে কথা শোনাব৷ এই লেখায়৷ যেমন করে পদ্মের পাপড়ি গুলো মেলে ধরা হয়-বিগ্রহর চরণতলে৷ ঠিক সেইভাবেই এক একটা ভ্রমণের পাপড়ি প্রিয় পাঠক-পাঠিকার চোখের সামনে মেলে ধরব৷ আসল কথা, এটা একটা অজানা কাহিনীর গল্প৷ অজানা রাষ্ট্রের বিবরণ৷ তাদের ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, ধর্ম এবং আরো অনেক কিছু,যা জানলে মন তৃপ্ত হবে৷ এও এক অচিন দেশ৷ উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে পড়ে৷ এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র৷
এবার একটু এই লেখার গৌড়চন্দ্রিকা করি৷ কানাডা আমি দুবার ঘুরে এলাম৷ ওখানকার অনেক তথ্য আমার নখদর্পণে৷ অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল এই লেখা ধারাবাহিক ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তাহলে একটা দস্তাভেজের মতন তৈরি করা যাবে৷
সে যাই হোক৷ এবার আসি ভ্রমনের স্মৃতিতে৷ কানাডার লোক সংখ্যা প্রায় তিনকোটি সত্তর হাজারের কাছাকাছি৷ এটা আমার হিসাব নয়৷ আদমসূমারীর হিসাব৷ ২০২৩ সালের হিসাব৷ সব হিসাব খাতায় পেন্সিলে লিখে দেখিয়ে দেব৷ লেখা যখন শুরু করেছি তার দায়বদ্ধতা লেখকের৷ কানাডয় দশটা স্বয়ং শাসিত রাজ্য আছে৷ আর আছে তিনখানা কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য৷ ধর্মের দিক দিয়ে খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীর মানুষ বেশী৷ প্রায় ৬৭%৷ অর্থাৎ লোকসংখ্যার একশভাগের মধ্যে ৩৩% মানুষ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী৷ তার মধ্যে মুসলিম, শিখ, হিন্দু , বৌদ্ধ, ইহুদি এবং অন্যান্য৷
কানাডার সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র৷ রাজা হলেন-তৃতীয় চার্লস৷ যতদিন রানী এলিজাবথ জীবিত ছিলেন, ততদিন তিনিই ছিলেন সাংবিধানিক উচ্চ আসনের অধিকারী৷ প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে-জাস্টিন ট্রুডো৷ এক সময়ে জাস্টিন ট্রুডোর পিতাও কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ তাঁর নাম ছিল-পিয়েরে ট্রুডো৷ তাঁর রাজত্ব কাল ছিল ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ এবং ৩রা মার্চ-১৯৮০ থেকে ৩০ শে জুন ১৯৮৪৷ সেই সময়ে রাজা ছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ তিনি ছিলেন কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ এবং সফলতম রাজনীতিবিদ৷ মনট্রিলে যে বিমান বন্দ্রটি আছে সেটির নাম পিয়ার এলিয়ট ট্রুডো ইন্টার ন্যাশানাল এয়ার পোর্ট৷ এই এয়ার পোর্টটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাবা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নামে নামাঙ্কিত৷
আমরা সাধারণত যারা কানাডায় টরেন্টো এয়ার পোর্ট অবতরন করি তার নাম Toronto pearson Airport, বিশাল বড় বিমান বন্দর৷ কিছুটা গোলক ধাধার মতো৷ নীচে ওপরে লিফ্টে বিমানযাত্রীরা ঘোরাঘুরি করে তবে নির্দিষ্ট টারমিনালে পৌঁছায়৷ কলকাতার দমদম অরথাৎ নেতাজী সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ভায়া দুবাই হয়ে কানাডার টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছতে প্রায় কুড়ি থেকে তেইশ ঘন্টা লেগে যায়৷ বলতে গেলে একটা দিন৷ আটলান্টিক মহাসাগর পার হতে সময় লাগে সাত থেকে আট ঘন্টা৷ কলকাতা থেকে দুবাই ছয় ঘন্টার ধাক্কা৷ দমদমে সিকিউরিটি চেক যেমন হয়৷ সেইরকম দুবাইতেও সিকিউরিটি চেক বাধ্যতামূলক৷ টরেন্টো এয়ার পোর্টে আবার ইমিগ্রেশান সেও কম ঝামেলার ব্যাপার নয়৷
এসব সিকিউরিটি চেক, ইমিগ্রেশান, ভিসা দেখার পদ্বতি প্রায় সব দেশেতেই প্রবেশ করতে গেলে, নিয়মের মধ্যে পড়ে৷
কানাডার বৃহত্তম নগরী টরেন্টো৷ সরকারী ভাষা- ইরেজি ও ফরাসি৷ বিশেষ করে ফ্রেঞ্চ ভাষাটা মনট্রিলে বেশি চলে৷ এখানে আইনসভা সংসদ৷ উচ্চকক্ষঃ-সিনেট৷ নিম্ন কক্ষঃ-হাউস-অফ-কমন্স৷ কানাডিয়ান ব্যাবস বানিজ্য চলে কানাডিয়ান ডলারে৷