অবশেষে শৈত্য কাটিয়ে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে বুধবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার উভয় পক্ষই একমত হয়েছেন যে, ভারত ও চিনের সম্পর্ক দৃঢ় হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে চাপানউতোরের পর দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মোদী-শি বৈঠকে।
বুধবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী মতপার্থক্য এবং বিরোধগুলির প্রভাব শান্তি প্রক্রিয়াকে যাতে কোনও ভাবেই বিঘ্নিত না করে তার উপর বিশেষ জোর দেন। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, দুই দেশের প্রধান উল্লেখ করেছেন, ভারত-চিন সীমান্ত প্রশ্নে সমস্যার সমাধানে এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিনিধিদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মোদী এবং জিনপিং বিশেষ প্রতিনিধিদের দ্রুত আলোচনা করার এবং তাঁদের প্রচেষ্টাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মিশ্রি বলেন, ‘আমরা উপযুক্ত সময়ে প্রতিনিধিদের পরবর্তী বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারণ করছি।’ এছাড়াও বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ে দ্রুত আলোচনা শুরুর ব্যাপারেও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। মিশ্রি জানান, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনের বিশেষ প্রতিনিধি তথা সেই দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে আর কোনও বৈঠক হয়নি। আজকের পরে আশা করছি খুব দ্রুত বপিঠকে বসবেন বিশেষ প্রতিনিধিরা।’
চলতি সপ্তাহেই ভারত ও চিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রহরা দেওয়া নিয়ে চুক্তি হয়েছে ৷ এরপর রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে মুখোমুখি দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বুধবার সন্ধ্যায় জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি লেখেন, ‘কাজানে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল৷ দেশের মানুষের জন্য ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বিশ্বে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা আনতে দুই দেশের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য ৷ পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সংবেদনশীলতাই উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন দিশা দেখাবে৷’
গত সোমবার পূর্ব লাদাখের ভারত-চিন আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের সেনার পাহারা দেওয়া নিয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়৷ এই চুক্তিকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ ওই চুক্তির পরই বৈঠকে বসলেন মোদী এবং জিনপিং।
এই বৈঠক প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘পাঁচ বছর পর আমাদের মধ্যে সরকারি বৈঠক হল ৷ আমরা বিশ্বাস করি ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, শুধুমাত্র আমাদের দুই দেশের মানুষের জন্য নয়, বিশ্বে উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতির জন্যও৷ গত ৪ বছরে আন্তর্জাতিক সীমান্তে যে বিষয়গুলি নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়ে একমত হতে পেরেছে দুই দেশ৷ এই বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই৷ সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার৷’
বিদেশসচিব আরও জানান, ‘মোদী এবং জিনপিং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। সীমান্ত এলাকায় শান্তি পুনরুদ্ধার করে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোনো হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে গালওয়ানে ভারত ও চিন সেনার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ এরপর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে ৷ তার আগে ২০১৯ সালে তামিলনাড়ুর মহাবলিপূরমে শি-মোদী সাক্ষাৎ হয়েছিল৷ এরপর ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনে তাঁদের দেখা হয় ৷ ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গেও দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছিল ৷
চিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ভূখন্ড দখল নিয়ে বারবার অভিযোগ করে এসেছে ভারত। লাদাখকে কেন্দ্র করে প্রতিরক্ষা ও বিদেশমন্ত্রক স্টোরে একাধিকবার বৈঠক হয় দিল্লিতে। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে সংঘাতের অবসানে উভয় দেশের ঐক্যমত্যের পর এই বৈঠক কতদূর ফলপ্রসূ হবে তা বলবে আগামী দিন।