বুধবার রাতে সরকারিভাবে অভিযানের ইতি টানা হয়েছে। পাক সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে সফল হয়েছে অভিযান। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ কাটেনি। পাক সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তরার যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ।
ইসলামাবাদ দাবি করেছে, মঙ্গলবার সকালে বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারগামী ট্রেনটি বিদ্রোহীরা কব্জায় আনার সময় তাতে ৪৪০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সেনা বা সরকারের তরফে উদ্ধার করা যাত্রীদের সংখ্যাটা ঠিক কত তা জানানো হয়নি। একই ভাবে বিতর্ক রয়েছে হতাহতের সংখ্যা নিয়েও। পাক সেনার দাবি, তারা ৩৩ জন বিদ্রোহীকে খতম করেছে। নিহত হয়েছেন ২১ জন রেলযাত্রী এবং আধাসেনা বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের ৪ জন জওয়ান।
এর পাল্টা এলএ-র তরফে বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়েছে, পাক ফৌজ তাদের ৩৩ জন যোদ্ধা নিহত হওয়ার যে দাবি করছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, মঙ্গলবার সকালে কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি এলাকায় মাশকাফের ৮ নম্বর পাহাড়ি সুড়ঙ্গের সামনে জাফর এক্সপ্রেস কব্জায় আনার পরেই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল বিএলএ। বালুচিস্তান থেকে পাকিস্তান এবং চিনকে হাত গোটানোর শর্ত দেওয়ার পাশাপাশি বালুচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির শর্ত রেখেছিল তারা। কিন্তু সেই দাবি না মেনে, পাক সেনার স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি) এবং ফ্রন্টিয়ার কোরের কমান্ডোরা অভিযান শুরু করেছিলেন। বুধবার রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই বালুচ বিদ্রোহীদের উপর পাক সেনার কোবরা হেলিকপ্টার হামলা শুরু করেছিল। মূলত, সুড়ঙ্গের আশপাশের পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া বিদ্রোহীদের নিকেশ করতেই থার্মাল ইমেজ়িং সেন্সর ব্যবহার করে ভারি মেশিনগানের গুলি এবং বোমাবর্ষণ চলে। বুধবার ভোরের আলো ফুটতেই ৮ নম্বর বাদে মাশকাফের বাকি ১৬টি সুড়ঙ্গকে বিদ্রোহী মুক্ত করার অভিযান শুরু করেছিল পাক ফৌজ। দুপুর গড়াতে শুরু হয়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের অভিযান। লেফটেন্যান্ট জেনারেল শরিফের দাবি, বিএলএর ফিদায়েঁ (আত্মঘাতী) বাহিনী মজিদ ব্রিগেডের যোদ্ধারা বিস্ফোরক ভরা বর্ম পরে পণবন্দিদের ঘিরে রাখায় উদ্ধারের কাজে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঝটিতি কমান্ডো হামলা চালানো হয়েছিল মজিদ ব্রিগেডের উপর। আর তাতেই সাফল্য এসেছে।
বুধবার আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, কোয়েটা স্টেশনে মজুত করা হয়েছে প্রায় ২০০টি কফিন। ঠিক তার আগেই বিএলএ-র তরফে ৫০ জন পণবন্দিকে খুনের দাবি করা হয়েছিল। ফলে ইসলামাবাদ ২১ জন যাত্রীর মৃত্যুর দাবি করলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সংশয় রয়েছে, সেনা অভিযানে মুক্তি পাওয়া যাত্রীর সংখ্যা নিয়েও। কারণ, অপহরণের পরেই মহিলা, শিশু এবং বালুচ জনগোষ্ঠীর যাত্রী মিলে প্রায় ২০০ জনকে মুক্তি দিয়েছিল বিদ্রোহীরা। সে কথা খোলাখুলি স্বীকারও করেছেন মুক্তিপ্রাপ্তেরা। বালুচ বিদ্রোহীদের মূল অভিযোগ পাঞ্জাবী আধিপত্যবাদের’ বিরুদ্ধে। জাফর এক্সপ্রেসের যাত্রী পাঞ্জাবী অসামরিক পুরুষ এবং সেনা-আধাসেনা কর্মীদেরই মূলত পণবন্দি বানিয়েছিলেন তাঁরা।