লেবাননজোড়া পেজার বিস্ফোরণে দুই শিশু সহ হত অন্তত ১২, আহত সহস্রাধিক

মঙ্গলবার পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল সমগ্র লেবানন! জঙ্গি দল হেজবোল্লা যোগাযোগের জন্য যেসব পেজার যন্ত্র ব্যবহার করত, সেরকম অসংখ্য পেজার সারা লেবানন জুড়ে একের পর এক ফাটতে থাকল। এই দুর্ঘটনায় দুই শিশু সহ নিহতে অন্তত ১২ জন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী আহতের সংখ্যা ২৮০০-র বেশি, যার মধ্যে অনেকের আঘাতই গুরুতর।

কীভাবে এই দুর্ঘটনা হল, তা পরিষ্কার নয়। খুব অত্যাধুনিক এবং অভিনব ভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। যদিও এর দায় কেউই এখনও সরাসরি স্বীকার করে নেয়নি, তবে হেজবোল্লা দুষছে প্রতিদ্বন্দ্বী ইজরায়েলকেই। ইজরায়েলি আধিকারিকরা এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।

মঙ্গলবার লেবাননের স্থানীয় সময় দুপুর ৩:৪৫ নাগাদ রাজধানী শহর বেইরুটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাঁরা হঠাৎই বিভিন্ন লোকজনের পকেট থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। তার পর পরই বন্দুক বা পটকার আওয়াজের মতো বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। একটা সিসিটিভি ফুটেজে একজনের ট্রাউজারের পকেটে একটা পেজার ফেটে যেতে দেখা যায়।


সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, পেজারগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটার আগে হেজবোল্লা নেতৃত্বের কাছ থেকে মেসেজ এসে পৌঁছোয়। মেসেজগুলো ডিটোনেটরের কাজ করেছে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে এই বিস্ফোরণ চলতে থাকে। তার কিছুক্ষণ পর থেকেই লেবাননের নানা হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহতদের ভিড় জমতে থাকে।

ঠিক কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটল, এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতানৈক্য রয়েছে। হেজবোল্লা নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত থাকে – ফলে অন্তর্ঘাতের কথা তুলছেন কেউ কেউ। আবার কারও মতে, পেজারগুলোতে হ্যাক হওয়ার ফলে পেজারের ব্যাটারি অত্যন্ত গরম হয়ে গিয়ে ফেটে যায়। এরকম ঘটনা যদিও অভূতপূর্ব।
তবে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে পেজার ফেটে যাওয়ার ঘটনা এটা নয়। সরবরাহ শৃঙ্খলঘটিত আক্রমণ বলেও সন্দেহ অনেকের – যাতে উৎপাদনের সময়ে বা পরিবহনের সময়ে পেজারগুলোকে বিকৃত করে দেওয়া হতে পারে। বিশেষত, এখন সরবরাহ শৃঙ্খলে দুর্ঘটনা সাইবার বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। তাই এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে, এইসব সরবরাহ শৃঙ্খলঘটিত দুর্ঘটনা মূলত সফটওয়্যারভিত্তিক। হার্ডওয়্যারভিত্তিক দুর্ঘটনা ঘটাতে হলে বিরাট পরিমাণে অন্তর্ঘাত প্রয়োজন। লেবাননের নিরাপত্তা আধিকারিকদের ধারণা, পেজারগুলোর মধ্যে অল্প পরিমাণে বিস্ফোরক শুরু থেকেই ছিল। পরে তা রিমোটের মাধ্যমে ডিটোনেট করা হয়।

নিহতদের মধ্যে দুই হেজবোল্লা সাংসদের ছেলে ছিল। এক হেজবোল্লা সদস্যের মেয়েও প্রাণ হারান। আহতদের মধ্যে উল্লেখ্য হলেন লেবাননের ইরানের রাষ্ট্রদূত, মুজতবা আমানি।