কিয়েভ, ২৪ ফেব্রুয়ারি – রাশিয়া-ইউক্রেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ২ বছর পূর্ণ হল। কবে এই যুদ্ধ থামবে তা অনিশ্চিত। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার ইউক্রেনের আকাশে ঢুকে পড়েছিল রুশ যুদ্ধবিমান। শুরুর দিকে পিছু হঠলেও, দ্রুত পালটা মার দিতে শুরু করে ইউক্রেনীয় সেনা। যুদ্ধে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে পশ্চিমি দুনিয়ার সমর্থনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির বাহিনী নাস্তানাবুদ করে রাশিয়াকে । এখন আবার রুশ সেনা ইউক্রেনকে চাপ দিতে শুরু করেছে । এই দুই বছরের সংঘাতে সাধারণ মানুষকে কতটা অসহায় তা উপলব্ধি করা যাচ্ছে উপগ্রহ চিত্র দেখে। বাখমুট , ফেওডসিয়া, আভডিভকার মতো প্রদেশের ছবিতে সবুজে ঘেরা জনবসতিগুলো ধূসর জনহীন প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেয় যে যুদ্ধ , তার বাস্তব ছবি দেখছে আজকের সভ্য দুনিয়া।
রাশিয়া সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা আভডিভকা সম্পূর্ণ ভাবে দখল করেছে। এর পরই ইউক্রেনের তরফে জানানো হয়েছে, ”ইউরোপে শান্তির দিন চলে গেছে।” রাষ্ট্রসংঘ জানাচ্ছে, রাশিয়ার হামলার পর থেকে ইউক্রেনের ১.৪ কোটি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে দশ হাজার সাধারণ মানুষের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালেও এই যুদ্ধের নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে আগামি দিনের ছবিটা কেমন হবে তা ভাবলে শিউরে উঠতে হবে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী , ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে। চলতি মাসে আভদিভকা শহর দখল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। নতুন করে মারিয়ুপোলের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছে তারা। অন্য দিকে, কিভকে দেওয়া আমেরিকা-সহ পশ্চিম বিশ্বের সামরিক সাহায্য কমে এসেছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের দ্বিতীয় ভাগে অনেকটাই সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে মস্কো।
এদিকে গত ১৪ জানুয়ারি আজভ সাগরে রাশিয়ার নজরদারি বিমানটি গুলি করে নামিয়ে ছিল ইউক্রেন। ভারতীয় মুদ্রায় যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। এই নজরদারি বিমানটি ছিল তৎকালীন সোভিয়েত যুগের। এটি বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও শত্রুপক্ষের বিমান শনাক্ত করতে সক্ষম।যুদ্ধবিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এ-৫০ বিমানের ধবংসের খবর সত্যি হয় তাহলে নিঃসন্দেহে এটা রাশিয়ার ব্যর্থতা। মোট ছয়টি এ-৫০ নজরদারি বিমান ছিল রাশিয়ার হাতে। যার দুটি ধ্বংস হয়ে গেছে ইউক্রেনের হামলায়। হিসেবমতো এখন ৪টি বিমান রইল ক্রেমলিনের কাছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। মস্কোর হিসেবে অনুযায়ী তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের ‘নির্দিষ্ট ৭০টি লক্ষ্যে’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী। পাশাপাশি, স্থল এবং জলপথেও শুরু হয়ে যায় আগ্রাসন।
আক্রমণ শুরু হয়েছিল জলপথেও। রুশ হামলার দ্বিতীয় দিনেই পতনের মুখে দাঁড়িয়েছিল ইউক্রেনের পরিত্যক্ত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চেরনোবিল। ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে পৌঁছে গিয়েছিল রুশ ফৌজ। সীমিত ক্ষমতা নিয়েও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সেনা রুখে দাঁড়ায় । শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ।
২০২২ সালের ৪ জুন, যুদ্ধের ১০০ তম দিনে জ়েলেনস্কি জানিয়েছিলেন, তাঁর দেশের ২০ শতাংশ এলাকা রুশ বাহিনীর দখলে। গত দু’বছরে ওই অঞ্চলের কিছু জনপদ রুশ সেনার দখলে এসেছে। অন্য দিকে, দীর্ঘ দু’বছরের অসম যুদ্ধে ইউক্রেন সেনা এখন অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের অভাবে ভুগতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি করে দেখা দিয়েছে গোলাবারুদের অভাব। প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কির মুখে একাধিক বার সেই অভাবের কথা উঠে এসেছে। ঘাটতি রয়েছে জনবলেরও। এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে আর কত দিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়েও সংশয় তৈরী হয়েছে । তবুও আক্রমণ-পালটা আক্রমণে বজায় রয়েছে রক্তক্ষয়ী লড়াই।