ইরানে সামরিক ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে হামলা চালাল ১০০টি ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান। শনিবার ভোরে যুদ্ধবিমান ছাড়া ড্রোনের সাহায্যেও দুই দফায় ইরানে হামলা চালানো হয়। রাজধানী তেহরান-সহ ইরানের তিনটি জায়গায় হামলা চালায় ইজরায়েল। এই হামলার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ডেজ অফ রিপেনট্যান্স’ অর্থাৎ ‘অনুতপ্ত অভিযানের দিন’। শনিবারের এই হামলার পরই আকাশসীমা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয় ইরান ছাড়াও আরও দুটি দেশ, সিরিয়া ও ইরাক। ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, এই তিন দেশের আকাশসীমা দিয়ে কোনও বিমান যাতায়াত করছে না। যদিও হামলার পরই ইরান দাবি করে বিমান পরিষেবা চালু করা হয়েছে। অন্য দিকে ইরাক জানিয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের আকাশসীমা বন্ধ করা হয়েছে। হামলার প্রভাব যাতে কোনও অসামরিক বিমানে না পড়ে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে সেখানকার সংবাদমাধ্যমগুলিতে দাবি করা হয়েছে। ইরানে হামলার পর পরই আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতে পদক্ষেপ করে ইরাক।
ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ। গত ১ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। এবার তার পাল্টা জবাব দিল ইজরায়েল। ইরানে এবার এয়ারস্ট্রাইক শুরু করল ইজরায়েল। ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস তথা আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ইরানের সামরিক ঘাঁটিগুলিতে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে। ইজরায়েলে ইরানের হামলার বিরুদ্ধেই এই পাল্টা অভিযান। এক্স হ্যান্ডেলে এক ভিডিও বার্তায় একটা জানান ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাজারী। ইজরায়েলি বিমান, ফাইটার জেট এবং রিফুয়েলার্স-সহ, ইজরায়েল থেকে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দূরে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে চলে এই বিমান হামলা। পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, এই হামলায় উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ফাইটার জেটের পাশাপাশি মাটির লক্ষ্যবস্তুতে হামলার উপযোগী এফ-১৫আই র্যাম ‘গ্রাউন্ড অ্যাটাক জেট’ ব্যবহার করা হয়েছে।
সিরিয়ার দাবি , বিমান হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। ইরানে শনিবার ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই আকাশসীমা সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আকাশসীমা। গত ১ অক্টোবর ইজরায়েলে ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ইরানের বিরুদ্ধে। সেই হামলার ‘বদলা’ নিতেই ইরানে ধারাবাহিকভাবে পাল্টা হামলা চালায় ইজরায়েল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের হামলায় হিজবুল্লা প্রধান নাসরাল্লা-সহ বেশ কয়েক জন শীর্ষনেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইজরায়েল।
যদিও ইজরায়েলের এই এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ইজরায়েলের হামলার মোকাবিলা করেছে। কিছু জায়গায় ‘সীমিত ক্ষতি’ হয়েছে। এক বিবৃতিতে ইরানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইজরায়েল তেহরান, খুজেস্তান এবং ইলাম প্রদেশের সামরিক ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালিয়েছে।মার্কিন ও ইজরায়েলি সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের রাজধানী এবং নিকটবর্তী সামরিক ঘাঁটিতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এয়ারস্ট্রাইক হয়েছে। ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিশানা করা হয়েছিল। আইডিএফ আইএএফ প্রধান মেজর জেনারেল টোমার বার-সহ ইজরায়েলি বিমান বাহিনীর কমান্ড সেন্টার থেকে ইরানের উপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে খবর, তেহরানের দক্ষিণে তেল শোধনাগারে কোনও অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়নি। ইরানের অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত রুটের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ইরানের পাশাপাশি লেবাননেও হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব লেবাননে ইজরায়েলি হানায় তিনজন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছে বলে খবর। হিজবুল্লা সমর্থিত একটি সংবাদ সংস্থায় তাঁরা কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। লেবাননে হামলা চালানো বন্ধ না করলে পরিণতি ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরান। শুধু তা-ই নয়, ইরানে হামলা চালালে তারাও যে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত সেই হুঁশিয়ারিও ইজ়রায়েলকে দেওয়া হচ্ছিল। কয়েকদিন আগে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় ইরান সমর্থিত হিজবুল্লা। এরপরই ইরানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দেয় আইডিএফ। এক বিবৃতি জারি করে এই হামলা প্রসঙ্গে ইজরায়েল দাবি করেছে, দেশকে নিরাপদ রাখতেই এই পদক্ষেপ।
এদিকে ইজরায়েলি হানায় গাজায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছে সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। শুক্রবার দক্ষিণ গাজায় আইডিএফের হামলায় ৩৮ জন সাধারণ মানুষ [প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি। মৃতদের মধ্যে রয়েছে ১৩ জন শিশু।