যুদ্ধের ধাক্কায় বেহাল অবস্থা রাশিয়ার অর্থনীতির। এই দেশের অর্থনীতি এখন এমন এক নজিরবিহীন ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যা সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধ পরিচালিত এক অর্থনীতির প্রতিফলন বলা যায়। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। সংকুচিত হচ্ছে কাজের বাজার, বাড়ছে সামাজিক উত্তেজনা। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অনুমানের থেকেও সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেশি।
সরকারি তথ্য অনুসারে, মাখন, মাংস এবং পেঁয়াজের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির দাম মাত্র এক বছরে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বহু সুপার মার্কেট ‘মূল্যবান’ মাখন তুলে রাখছে তালাবন্ধ ক্যাবিনেটে। এমনই এক দৃশ্য রাশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগেই এই মুদ্রাস্ফীতির আন্দাজ করে। কিন্তু যা আন্দাজ করা হয়েছিল তার থেকেও সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির হার ১০ শতাংশের এর কাছাকাছি। এই বিপুল মুদ্রাস্ফীতির কারণ হল, সামরিক ক্ষেত্রে ক্রেমলিন বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। লক্ষ লক্ষ রুশ সেনা যুদ্ধে ব্যস্ত। সেনার মৃত্যুর জন্য বিপুল আর্থিক সাহায্য দিতে হচ্ছে রাশিয়া সরকারকে। পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও কর্মীর অভাব মেটাতে কর্মী পিছু খরচ বাড়ছে। ২০২২ সাল থেকেই এই পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়ার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্দ্রা প্রকোপেনকো সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন ‘দামবৃদ্ধির কারণ যুদ্ধ।’ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে , শ্রমিকদের মজুরিও বাড়ছে। অর্থনীবিদরা একে ব্যাখ্যা করেছেন ‘উন্নয়ন ছাড়াই বৃদ্ধি’ বলে। ফলে জাতীয় যায় বাড়লেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা , প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর উন্নতি হয়নি। আগামী মাসগুলিতে মূল্যস্ফীতির চাপ আর আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীবিদরা। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তার মূল সুদের হার ২১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
এই যুদ্ধ অর্থনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনসংখ্যার একটি বড় অংশ। শিক্ষক, চিকিৎসক এবং অবসরপ্রাপ্তদের আয় স্থবির হয়ে পড়ে, ক্রমবর্ধমান দামের দ্রুত গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
কর্ম ক্ষমতা সম্পন্ন জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে রাশিয়ায়। জাতিসংঘের মতে ২০৩০ সালের মধ্যে এক সংকটের মুখোমুখি হবে রাশিয়া।