লাদাখ সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করল ভারত ও চিন 

সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করল ভারত-চিন উভয় দেশই। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বুধবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সেই বৈঠকের পরই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সেনা পিছিয়ে নেওয়া শুরু করল দুই দেশ। বিভিন্ন সূত্রে খবর, চলতি মাসের মধ্যেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা-য় ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনো’  এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’-র কাজ শেষ হবে।  ২০২০ সালের মে মাসের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে দুই দেশ।

 
অবশেষে বরফ গলার ইঙ্গিত মিলল। গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তে ভারত ও চিনের সম্পর্কের মধ্যে যে শৈত্যের বাতাবরণ তৈরী হয়েছিল, তা এবার পরিবর্তনের পথে।সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ডেমচকে এখনও পর্যন্ত দুই দেশই পাঁচটি করে সেনাছাউনি সরিয়ে নিয়েছে। ডেপসাংয়েও সেনা পিছিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে দুই দেশ। সেনা সরানোর এই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেনা প্রহরা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে হওয়া একটি পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী। সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, ভারতীয় সেনারা এই অঞ্চলগুলি থেকে যুদ্ধের বিভিন্ন সরঞ্জাম ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।  প্রসঙ্গত,  গত সপ্তাহেই লাদাখে সেনা অবস্থান নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় পৌঁছেছে ভারত এবং চিন। ফলে এই প্রক্রিয়াকে দুই দেশের মধ্যে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান ঘটার পথে অগ্রগতি বলা যেতে পারে।  
 
২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর ভারত-চিন সম্পর্কে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। ওই সংঘর্ষ গত কয়েক দশকের মধ্যে দুই পক্ষের সবথেকে গুরুতর সামরিক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা  পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন।
 
গালওয়ান-কাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে এলএসির কিছু এলাকায় ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনো’ এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’-র বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। কিন্তু প্যাংগং হ্রদ লাগোয়া ফিঙ্গার এরিয়া, ডেপসাং উপত্যকা-সহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে সমস্যা অমীমাংসিতই ছিল। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান হল। 
 
চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই ডেপসাং, ডেমচক এলাকা থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গত চার বছরে যে সব অস্থায়ী সেনা ছাউনি তৈরি হয়েছিল, সেসবও সরিয়ে ফেলা হবে। আগের মতোই সীমান্তে টহল দেবে দুই দেশের সেনা।  কিন্তু ‘টহলদারি সীমানা’ নিয়ে যাতে কোনও মতভেদ না হয় সে দিকেও নজর রাখা হবে। সেনা সূত্রে খবর, টহলদারির বিষয়ে উভয় দেশই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানবে। 
 
ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ২১ অক্টোবর দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা আলোচনার পর চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এটি ২০২০ সালে উদ্ভূত সমস্যাগুলির সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।