১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা ও নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশ যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামাবাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানায় তবে সেই দাবিকে ভারত সর্বতােভাবে সমর্থনা জানাবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
এই প্রথমবারের মতাে ভারত এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে, একাত্তরের জন্য পাকিস্তানকে কােনােদিন ক্ষমা করা যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছে, তার সেই অনুভূতিকে ভারত গভীরভাবে মর্যাদা দেয়।
আগামি বছরের (২০২১) প্রথম দিন থেকেই ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ণ ও অস্থায়ী সদস্য হিসেবে যােগ দেবে। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুত্রগুলাে ইঙ্গিত দিয়েছে, ভারতের আগামি দুবছরের মেয়াদে যদি জাতিসংঘের ফোরামে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কোনও দাবি ওঠে, তাহলে ভারত সেই দাবিকে জোরালাে সমর্থন জানাবে। শুধু ক্ষমা প্রার্থনাই নয় , পাকিস্তানের নৃশংসতাকে ‘জেনােসাইড’ বা ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত প্রার দাবিতেও ভারতের সায় থাকবে। তবে সেই দাবিটা প্রথমে আসতে হবে বাংলাদেশের দিক থেকেই বলেছেন। দিল্লিতে সাউথ ব্লকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ( বিএম ) ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব স্মিতা পন্থ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুভূতিকে ভারত গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকের ঠিক পরপরই তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নবনিযুক্ত পাকিস্রানের হাইকমিশনার। সেই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি রা এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিজানি রাষ্ট্রদূতকে দ্বাৰ্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর কৃশংসতা বাংলাদেশ কমনও ভুলতে পারবে না এবং পাকিস্তানকে কখনো ক্ষমা ওই পারবে না।
সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলে স্মিতা পন্ত বলেন, এ কথা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না যে বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মদতে যে নিপীড়ন চালানাে হয়েছিল তাতে তিরিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত হন। দুই লক্ষেরও বেশি নারী সেখানে ধর্ষিতা ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুভূতিকে আমরা অনুধাবন ও গভীরভাবে সম্মান করি।
পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে ভারত এর আগে নিজেদের মনােভাব ও অবস্থান এতটা স্পষ্ট করে কখনাে জানায়নি। ভারতের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও এ খবর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন, এমন একাধিক সাবেক কুটনীতিবিদ ও বলেছেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত যদি যৌথভাবে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানায় তা আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে অবশ্যই ইসলামাবাদকে চাপের মুখে ফেলবে।
ভারতের নৌবাহিনীর ‘সেন্টার ফর এথিকস ও লিডারশিপ’- এর প্রধান এর কমােজোরি হরি কুনের ভাষায়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যে অফিসাররা তিরিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেও পার পেয়ে গেছেন, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানেটা খুব জরুরি বলেই মনে করি। পঞ্চাশ বছর পেরিতে হলেও বাংলাদেশ ও ভারত মিলে এই লক্ষে উদ্যোগ নিলে তা অবশ্যই সফল হতে পারে।