মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে উঠল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানানোর পাশাপাশি দিল্লি কীভাবে এই পরিস্থিতিকে দেখছে সেই বিষয়টিও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন মোদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় সময় হিসেবে শুক্রবার ভোরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের যে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, তাতে আমেরিকার কোনও ভূমিকা নেই। তিনি বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীই বাংলাদেশের দিকটি দেখবেন। বাংলাদেশ নিয়ে মোদী ও ট্রাম্পের আলোচনার বিষয়টি শুক্রবার জানিয়েছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি।
গত বছর থেকে অশান্ত বাংলাদেশ। ইউনূস সরকারের আমলে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। মোদী – ট্রাম্প বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠে আসে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ট্রাম্পকে। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পরও যে অস্থিরতা চলছে তা দেখেছে গোটা বিশ্বের মানুষ। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনি কী বলবেন। কারণ আমরা দেখেছি বাইডেন প্রশাসনের সময় আমেরিকা কীভাবে কাজ করেছিল। এরপর মহম্মদ ইউনূস জর্জ সোরোসের পুত্রের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সম্পর্কে কী বলতে চান ?’ এই প্রশ্নের জবাবেই ট্রাম্প বলেন, ‘সেখানে আমাদের দেশের কোনও ভূমিকা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। বহু বছর ধরে এই চেষ্টা চলছে।তাই বাংলাদেশের বিষয়টি আমি মোদীর উপরেই ছাড়তে চাই।’ ট্রাম্প যখন একথা বলেন তখন তাঁর পাশেই ছিলেন মোদী।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর দ্বৈপাক্ষিক বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের কাছে নিজের উদ্বেগ ব্যক্ত করেন মোদী। ট্রাম্পও জানান, তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন। প্রসঙ্গত, হাসিনার সরকারের পতনের পর অনেকে দাবি করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গোপনে পরামর্শ দিচ্ছে আমেরিকা। ফলে এদিন মোদীর সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আমেরিকার কোনও ভূমিকা নেই।
তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যের ভিন্ন ব্যাখ্যাও করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, মোদীর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি। বিষয়টি, অর্থাত উত্তর দেওয়ার ভার তিনি মোদীর উপর ছেড়ে দেন। তার মানে এই নয় যে, তিনি বাংলাদেশের বিষয়টি পুরোপুরি ভারতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। মোদীও এরপর বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনও উত্তর দেননি। এর পর তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান।
ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা ও সে সম্পর্কে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভারতের অবস্থান ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদী। নিজের উদ্বেগও ব্যক্ত করেছেন।’ বিদেশসচিব বলেন, ‘ আমরা আশা করছি, বাংলাদেশে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা ওদের সঙ্গে গঠনমূলক এবং স্থিতিশীল আলোচনা করতে পারব। তবে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের সঙ্গে সেই বিষয়ে কথা বলেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত বছর আগস্ট মাসে সরকারবিরোধী বিশাল বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়। হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকার হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে দিল্লিকে। এখনও তার জবাব দেয়নি দিল্লি। হাসিনা সংক্রান্ত নথিপত্রও ভারতে পাঠানো হয়েছে ঢাকা থেকে।
হাসিনা ভারতে চলে আসার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়েছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে হিন্দুদের উপর আক্রমণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় ইউনূস সরকার। এর ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ ধানমন্ডির বাড়ির বেশ খানিকটা অংশ ক্রেন দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ধানমন্ডিতে হাসিনার সুধা সদনেও। সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস এখনও বাংলাদেশের জেলে বন্দি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার মোদীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।