সোমবার সকালে সব জল্পনার অবসান হল। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়ে দিল, ‘বন্ধু’র কাছে আশ্রয় পেয়েছেন আসাদ। দীর্ঘদিনের ‘বন্ধু’কে সাহায্য করতে দ্বিধা করেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মানবিক কারণে সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সপরিবারে মস্কোয় পৌঁছেও গিয়েছেন আসাদ।
দীর্ঘ ৫ দশকের ক্ষমতার অবসান হয়েছে।সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।রবিবার পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। তাঁর গন্তব্য নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা জল্পনা। এরই মধ্যে গুজব রটে আসাদের বিমান আকাশে উড়তে দেখা গেলেও মাঝ আকাশে তা উধাও হয়ে গিয়েছে। সেই বিমান আর দেখা যাচ্ছে না। সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ল কি না তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। অনেকে দাবি করেন, বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আসাদের। অবশেষে রুশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি ।
রাশিয়ার একটি সরকারি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, ‘সিরিয়ার সঙ্কটের একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধানদীর্ঘ দিন ধরেই চেয়ে আসছে রাশিয়া। আমরা চাই, রাষ্ট্রপুঞ্জের তৎপরতায় এই বিষয়ে আবার কথাবার্তা শুরু হোক।’
রুশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে মস্কো। সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ সেনাঘাঁটি ও দূতাবাস সুরক্ষিত রাখার আশ্বাস দিয়েছে বিদ্রোহীরা। মস্কোর তরফে এও জানানো হয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিরিয়ার জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত এবং রাশিয়া-সিরিয়া সম্পর্কের উন্নতিতে আগ্রহী পুতিন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে চান তিনি। মস্কোর দাবি, বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার পরই দেশ ছাড়েন আসাদ।শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যই এই পদক্ষেপ বলে জানায় মস্কো।
দীর্ঘ দিন ধরে সিরিয়া গৃহযুদ্ধে দীর্ণ।সম্প্রতি তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একজোট হন বিদ্রোহীরা। গত কয়েক দিন ধরে একের পর এক শহর দখল করে নিয়ে বিদ্রোহীরা এগোচ্ছিলেন দামাস্কাসের দিকে। রবিবার সকালে বিদ্রোহীরা রাজধানীতে ঢুকে পড়েন। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আসাদ। গৃহযুদ্ধে তিনি বরাবরই পুতিনের সমর্থন পেয়ে এসেছিলেন।
দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস এখন জোলানির নেতৃত্বাধীন সংগঠন তাহিরির আল-শ্যাম-এর দখলে। রাস্তায় রাস্তায় বিজয়োল্লাসে মেতেছে বিদ্রোহীরা। এদিকে রাতারাতি সিরিয়ার এই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে চিন্তিত পশ্চিমী দেশগুলি। আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সিরিয়া ও তার সমর্থক রাশিয়া, ইরান, ও হিজবুল্লার ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর জোটসঙ্গীদের ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে সেই দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্রোহীরা এই মুহূর্তে সঠিক পথে চললেও, তাদের উপর সবসময় নজর রাখছে মার্কিন প্রশাসন।’ যদিও সিরিয়ার সাম্প্রতিক সঙ্কটে আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাক গলাতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন।