বাংলাদেশের সংবিধানে আর ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দের প্রয়োজন নেই– গত বুধবার বাংলাদেশ হাইকোর্টে এরকম সওয়াল করেছেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। প্রসঙ্গত শেখ হাসিনার জমানায় ২০১১ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়েছিল। ওই সংশোধনীতে সংবিধানের কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের আমলে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা’-র উল্লেখ থাকলেও পরবর্তী সময়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদের আমলে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ওই চারটি বিষয়কে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।
কিন্তু বুধবার মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে।’ তিনি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দের প্রয়োজন নেই বলে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান। আগে আল্লার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটি যেভাবে আগে ছিল, সেভাবেই চাইছি।’
রাজনৈতিক পালাবদলের পর বাংলাদেশে আর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রয়োজন নেই, এ কথাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান।
অন্যদিকে খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি তিন দফায় বাংলাদেশের ১৬৭জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। এ বিষয়ে বুধবার আমেরিকার বিদেশ দপ্তর স্পষ্ট ভাষায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চলবে না। শুধু সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথাই নয়, সেই সঙ্গে ইউনূস সরকারকে বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট সরকারের সম্পর্ক একেবারেই মধুর ছিল না। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলকে স্বাগত জানিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ইউনূস সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। এখন ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গে ভবিষ্যতে ট্রাম্প সরকার বাংলাদেশ সম্পর্কে কী অবস্থান নেবে, সেটাই দেখার।