আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই নিজের দেশকে এগিয়ে রাখতে গিয়ে অনেক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। সংস্কারমুখী সেই পদক্ষেপগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে হলেও আন্তর্জাতিক স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে আমদানি শুল্ক নীতি ভারত, ইজরায়েল ও চীন সহ বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হেনেছে। প্রভাব পড়েছে এশিয়া সহ আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারেও। অনেকের ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি বিশ্ব বাজারকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেজন্য ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতির মোকাবিলা কী ভাবে করা যায়, তার পথ খুঁজছে বর্তমান বিশ্ব।
প্রসঙ্গত দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যে সমস্ত দেশ আমেরিকার পণ্য থেকে যে পরিমাণ শুল্ক নিয়ে থাকে, তাদের উপরেও সমপরিমাণ শুল্ক চাপানো হবে। এ বিষয়ে আমেরিকার স্বার্থের কথাই শুধু মাথায় রাখা হবে। ট্রাম্পের নতুন নীতিতে প্রায় প্রতিটি দেশের উপরেই ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানো হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের এই নয়া শুল্ক নীতিতে খুশি নন ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। জানা গিয়েছে, ব্রিটেনের ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবিষয়ে যুক্তরাজ্যের সরকার নতুন কিছু চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সোমবারই বড় কোনও পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করতে পারেন। এমনই আভাস পাওয়া গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, দেশের ব্যবসাকে ‘শুল্ক-ঝড়’ থেকে রক্ষা করার জন্য তারা নতুন শিল্পনীতি ব্যবহার করতে প্রস্তুত তাঁরা। পাশাপাশি, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তির চেষ্টাও চালিয়ে যাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এই বাণিজ্য যুদ্ধ সামলাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে চলেছেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে। স্টার্মার মনে করেন, ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না যে, বাণিজ্যযুদ্ধই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।’
তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে অনেকে আবার ‘শাপে বর’ দেখতে শুরু করেছেন। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির ফলে বিভিন্ন দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের উপর জোর দেবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারের পথেও হাঁটবে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে ব্যাপকভাবে ধস নেমেছে। কার্যত টালমাটাল বিশ্ব বাজার। শেয়ার বাজারের এই দোদুল্যমান অবস্থা সামলাতে পারেনি আমেরিকার শেয়ার বাজার ওয়াল স্ট্রিটও। বিশেষ করে সেখানকার গাড়ি এবং ফার্মা শিল্পে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বলে খবরে প্রকাশ।
অন্যদিকে ব্রিটেনের অন্যতম গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার ট্রাম্পের নয়া শুল্ক নীতির ফলে তারা আপাতত আমেরিকায় গাড়ি পাঠানো থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী এক মাসের জন্য তারা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার রপ্তানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ নীতির মোকাবিলা করতে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে চাইছেন তাঁরা। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার পর আমেরিকায় গাড়ি রপ্তানির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।