আগস্ট থেকে দেশের বাইরে। বন্ধুদেশের আশ্রয়ে থাকলেও তিনি যে লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরছেন না, তা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের মাটি থেকেই এবার দলের নেতা-কর্মীদের ভোকাল টনিক দিলেন হাসিনা। কর্মী, সমর্থকদের আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা বললেন, ‘চিন্তা করবেন না। আমি আসতেছি। সব অভিযোগের বিচার হবে।’
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ছাড়েন হাসিনা। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করেন তিনি। দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তৈরি হোয়াটস অ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপগুলিতেও নিয়মিত নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সোমবার বিকালে বাংলাদেশের উত্তরপ্রান্তের জেলা লালমণিরহাটের কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা হয় হাসিনার। তীব্র ভাষায় হাসিনা আক্রমণ শানান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে।
হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে শান্তির দেশ বানাতে চেয়েছিলাম। অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিলাম। সেই দেশটাকে ইউনূস জঙ্গিদের দেশ বানিয়েছে।’ জঙ্গি, খুনি, সন্ত্রাসীরাই ইউনূসের শক্তি বলে ভাষণে মন্তব্য করেন হাসিনা। ইউনূসকে আক্রমণ করে হাসিনা বলেন, ‘উনি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ টেলিফোনের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। কর্মীদের টাকা চুরি করেছে। এজন্য শ্রম আদালতে তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সেই মামলা অবৈধ সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফের বিচার করা হবে।’
১ ঘণ্টা ১১ মিনিটের আলোচনায় আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টানেন শেখ হাসিনা। ইউনূসকে ‘মানবতা বিরোধী’, ‘গদ্দার’ বলেছেন মুজিবকন্যা। বাংলাদেশ ফিরে দলের কর্মী, সমর্থকদের উপর হওয়া মামলার বিচার করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। হাসিনা বলেন, ‘যাঁরা এই জঘন্য কাজ করেছে, তাঁদের বিচার বাংলাদেশে হতেই হবে। সেটি আমরা করবই। শহিদ পরিবারদের বলব, আপনারা ধৈর্য্য ধরুন। চিন্তা করবেন না। আসতেছি আমি। আল্লা সেই জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
সম্প্রতি আওয়ামী লীগে নেতানেত্রী এবং সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করে জেলবন্দির ‘ছক’ কষছে ইউনূস সরকার। সোমবারও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলা, ভাঙচুর ও খুনের চেষ্টার মামলায় হাসিনাপন্থী ৮৪ জন আইনজীবীর জামিন খারিজ করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বড় কোনও কর্মসূচি চোখে না পড়লেও, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটোখাটো মিছিল করেছেন দলের কর্মীরা।
ভোট নিয়ে গড়িমসি করার সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি-সহ বাংলাদেশের একাধিক দল। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নেয়নি। এই আবহে হাসিনার বার্তা অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় মুহাম্মদ নেতৃত্বে। প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা-সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।