লড়াই তীব্র, লেবাননে ৮ ইজরায়েলি সেনার মৃত্যু 

ইজরায়েলের আক্রমণের সম্মুখীন হতে হল দক্ষিণ লেবাননের স্থলভাগকে। এই আক্রমণ শুরু করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হতাহতের খবর আসতে শুরু করে। লেবাননের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে হিজবুল্লা জঙ্গিদের সঙ্গে তীব্র লড়াই শুরু হয় ইজরায়েলি সেনার।  একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হিজবুল্লার ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে এর মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন তেলআভিভের ৮ সৈনিক। লেবাননে রক্তক্ষয়ী অভিযানের এই অভিযানের কথা স্বীকার করেছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস তথা আইডিএফ। 


ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছে, ক্যাপ্টেন এইতান ইৎজাক অস্টার, ক্যাপ্টেন হেরেল এটিঙ্গার, ক্যাপ্টেন ইতাই এরিয়েল গিয়াত, সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস নোয়াম বারজিলে, সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস মন্টেজুর, সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস নাজার ইটকিন, স্টাফ সার্জেন্ট আলমকেন তেরেফ, এবং সার্জেন্ট ইডো ব্রায়ার -এঁরা সবাই দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় নিহত হয়েছেন। 
 
হিজবুল্লার দাবি, তিনটি ইজরায়েলি মারকাভা ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা হয়েছে। হিজবুল্লার মতে, ট্যাঙ্কগুলি  সিন্টার কাছে মারাউন আল-রাস  গ্রামের দিকে এগোচ্ছিল। ইজরায়েলি সামরিক সূত্র ট্যাঙ্কের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে উল্লেখ না করলেও জানিয়েছে, বিমান আক্রমণে তাদের স্থলবাহিনী খুব কাছ থেকে হিজবুল্লা যোদ্ধাদের হত্যা করেছে। লেবানন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও কামান পাঠিয়ে ইজরায়েল যখন ওই অঞ্চলে তার বাহিনী জোরদার করার চেষ্টা করছে তখনই এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
 
এদিকে হিজবুল্লা ও হামাসের সমর্থনকারী ইরানের এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় উত্তেজনা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যেই ইজরায়েলের সমর্থনে ওই অঞ্চলে সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। 
 
অন্যদিকে হিজবুল্লা ইজরায়েলে রকেট হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে ইজরায়েল। হিজবুল্লা বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা হামলা অব্যাহত রাখবে। 
 
 এই পরিস্থিতিতে গোপন আস্তানায় লুকিয়ে পড়েছেন ইরানের সুপ্রিম লিডার খামেনেই। এনিয়ে ভারতের ইজরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র গাই নির হুঁশিয়ারি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলেন, “ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লা আলি খামেনেই যদি পুরোদমে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তাহলে সেটা খুব বড় ভুল হবে। ইজরায়েল কৌশলগতভাবে ইরানের মিসাইল হামলার জবাব দেবে। তবে সেটা যুদ্ধ নয়। আমরা মনে হয় না কোনও তা চাইবে। আর যদি অন্য কোনও দেশ ইরানকে সাহায্য করে তাহলে তার উপরও আমাদের তীক্ষ্ণ নজর থাকবে।”

সমর বিশ্লেষকদের মতে, ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে তাতে হামাসের ষড়যন্ত্রই কার্যত সফল হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইহুদি দেশটিতে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে হেজবোল্লা। তাদের যুক্তি ছিল গাজায় হামাসকে সমর্থন জানিয়েই এই আক্রমণ শানানো হচ্ছে। পাশাপাশি লোহিত সাগর উত্তপ্ত করে রেখেছে ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের হাউথিরা। কয়েক মাস আগেই তারা তেল আভিভের মার্কিন দূতাবাসের সামনে ড্রোন হামলা চালায়। সেখানেও ঘটে প্রাণহানি। ফলে সবদিক থেকে ইজরায়েলকে কার্যত ঘিরে ফেলেছে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। আর এদের মাথায় রয়েছে ইরান। ফলে গাজায় হামাস কোণঠাসা হয়ে গেলেও ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ জারি রয়েছে। ক্রমেই গাজা থেকে এই সংঘাত বড় আকার ধারণ করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।