কুয়েতে আগুনে পুড়ে মারা গেলেন দাঁতনের দ্বারিকেশ পট্টনায়েক

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: বুধবার ভোর রাতে কুয়েতের একটি বহুতল আবাসনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৪২ জন ভারতীয়ের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ব্যক্তি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার  দ্বারিকেশ পট্টনায়েক (৫২)। আদতে তিনি দাঁতন থানার তুরকা অঞ্চলের খন্ডরুইয়ের বাসিন্দা হলেও, গত কয়েক বছর আগে মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীতে বাড়ি করেছিলেন। মেদিনীপুর শহরের সেই বাড়িতেই থাকেন স্ত্রী অন্তরা  এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত একমাত্র মেয়ে ঐশী। দ্বারিকেশের শ্বশুরমশাই কমলাকান্ত পট্টনায়েক আবার তুরকা অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ শোক-সংবাদ এসে পৌঁছয় পশ্চিম মেদিনীপুরে। তারপর থেকেই স্বজন হারানোর হাহাকার দুই বাড়িতে ।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৮ বছর আগে কর্মসূত্রে প্রথমে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন দ্বারিকেশ। সেখান থেকে বাহরিন এবং পরে কুয়েত। কুয়েতেই গত ২০ বছর ধরে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতেন দ্বারিকেশ। প্রমোশন পেয়ে  এন বি টি সি  কোম্পানির সুপারভাইজার পদও পেয়েছিলেন গত কয়েক বছর আগে।

বুধবার ভোররাতে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার যে বহুতল আবাসনে আগুন লাগে, সেই আবাসনেই শতাধিক ভারতীয় শ্রমিকদের সঙ্গে ছিলেন দ্বারিকেশও। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন আবাসনের শতাধিক বাসিন্দা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে, ৪২ জনই ভারতীয় ।


বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ কোম্পানির তরফে নিশ্চিত করা হয় মৃতদের তালিকা। জানা যায়, মৃত ভারতীয়দের মধ্যে বেশিরভাগই কেরালার বাসিন্দা। এছাড়াও, তামিলনাড়ু, ওড়িশার কয়েকজন আছেন । মৃতদের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে আছেন একমাত্র দ্বারিকেশ পট্টনায়েক-ই।

উল্লেখ্য , দাঁতনের তুরকা অঞ্চলের খন্ডরুইয়ের বাসিন্দা দ্বারিকেশ পট্টনায়েক তাঁর একমাত্র মেয়ে ঐশীর পড়াশোনার জন্য বেশ কয়েক বছর আগেই চলে এসেছিলেন জেলা শহর মেদিনীপুরে। গত ৪-৫ বছর আগে মেদিনীপুর শহরের শরৎপ্লীতে নিজের বাড়িও করেছিলেন। মেয়ে ঐশী শহরের মেদিনীপুর কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বুধবার দুপুর থেকেই চরম দুশ্চিন্তায় আতঙ্কের প্রহর গুনছিলেন পরিবারের সকলে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জানতে পারেন, না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন তাঁদের আপনজন। বৃহস্পতিবার রাতে মেদিনীপুর শহরের বাড়িতে দাঁড়িয়ে মৃত দ্বারিকেশ পট্টনায়েকের শ্যালক সায়ন্তন পট্টনায়েক বলেন, “জামাইবাবু প্রতিদিন সকালে দিদিকে ফোন করতেন। বুধবার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও ফোন করেননি ।  ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না জামাইবাবুকে। এরপরই, জামাইবাবুর সহকর্মী, যিনি কেরলের বাসিন্দা, তাঁকে ফোন করেন দিদি। কিন্তু উনি ছুটি নিয়ে নিজের বাড়ি (কেরলে) চলে গিয়েছিলেন। তিনিই কিছুক্ষণ পর খোঁজ নিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানান এবং টিভি দেখতে বলেন। এরপরই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় এবং বলা হয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সকলকেই। তখন থেকেই  তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

শুক্রবার কোম্পানির তরফে দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ওখান থেকে আমরা গ্রামের বাড়িতে (খন্ডরুইয়ে) নিয়ে যাব। ওখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এর আগে মেদিনীপুরে শরৎপল্লীর বাড়িতেও একবার মরদেহ নিয়ে আসা হবে।

মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা জানান, এই শোক সংবাদ পেয়ে দলের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে গভীর শোক প্রকাশ করে সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তার  পরিবারের প্রতি সমস্ত ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে তিনি জানান।