• facebook
  • twitter
Saturday, 26 April, 2025

রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইন হস্তান্তর করতে ইউক্রেনের কাছে দাবি ট্রাম্পের

ইউক্রেনের খনিজের পর এবার ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী রাশিয়ার পাইপলাইনের অধিকার দাবি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ফাইল চিত্র

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে, ইউক্রেনের কাছে বড়সড় দাবি জানাল আমেরিকা। আমেরিকা চায়, ইউক্রেন তাদের দেশের মধ্যে দিয়ে যাওয়া গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে তুলে দিক। এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ ভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ চান। এর মধ্যে রয়েছে মূল্যবান রেয়ার আর্থ মিনারেলসও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে যে অস্ত্র সরবরাহ করে এসেছে, তারই মূল্য চোকাতে তিনি চান ইউক্রেনের খনিজ ভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে আমেরিকা ইউক্রেনকে ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থাত ৩০.১৬ লক্ষ কোটি টাকা সাহায্য করেছে। তিনি এই চুক্তির মাধ্যমে সেই টাকা ফেরত নিতে চান।

ইউক্রেনের খনিজের পর এবার ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী রাশিয়ার পাইপলাইনের অধিকার দাবি করেছে আমেরিকা। ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন ইউক্রেনের উপর দিয়ে গিয়েছে। এর গুরুত্ব কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার আমেরিকা সেই পাইপলাইনের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়। ট্রাম্পের এই দাবি বিশেষ তাতপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আমেরিকার এই দাবিকে ‘ঔপনিবেশিক চাপ’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজচুক্তি সম্পন্ন করতে গত শুক্রবার বৈঠকে বসেছিল ওয়াশিংটন ও কিয়েভের আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, সেখানেই আগের তুলনায় আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখায় ট্রাম্প প্রশাসন। ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ তো বটেই আমেরিকা প্রস্তাব দেয় ইউক্রেনের উপর দিয়ে যাওয়া রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে হবে আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কর্পোরেশনের হাতে। আমেরিকার এহেন দাবিতে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ইউক্রেন।

এই পাইপলাইন রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ইউরোপের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রাশিয়া ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাস বিক্রি করে। অন্যদিকে, ইউক্রেন ট্রানজিট ফি হিসেবে ভালো আয় করে। পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার হাতে গেলে এই অঞ্চলে তাদের ক্ষমতা বাড়বে। রাশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর উপর তারা আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেন এটি বন্ধ করে দেয়। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। এবার সেই পাইপলাইন আমেরিকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাওয়াকে মোটেই সহজভাবে দেখছে না ইউক্রেন।

কিয়েভের সেন্টার ফর ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজির শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিমির লানদা বলেন, ‘আমেরিকা চাইছে যতটা সম্ভব আদায় করে নিতে। তবে এই ঔপনিবেশিক চাপ কিয়েভের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের দাবি মতো ইউক্রেনের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের খনিজ আমেরিকাকে দিতে রাজি হয়েছিলেন জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেনের দাবি ছিল এই চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেবে আমেোরিকা। অর্থাৎ ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। যদিও তাঁর সে দাবি খারিজ করে দেয় আমেরিকা। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিঃশর্তভাবে এই চুক্তি সাক্ষর করতে হবে ইউক্রেনকে।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, খনিজ চুক্তি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে ইউক্রেনের আধুনিকীকরণে সাহায্য করা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র ইউক্রেনের অধিকার রক্ষা করছি। এটি আমেরিকা ও ইউক্রেন উভয়ের জন্যই উপকারী হওয়া উচিত। সেটিই সঠিক কাজ।’