করোনায় জীবন রক্ষায় সহজলোভ্য ওষুধ এখন হাতের নাগালে। এমনই দাবি করেছেন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি ডেক্সামেথাসোন নামের এই ওষুধটি করোনা যুদ্ধে অচিরেই শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠবে। খুবই কম মাত্রায় স্টেরেয়ড ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করে মৃত্যু পথযাত্রী রোগীদেরকেও সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
এমনকি যে সমস্ত রোগীদের ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁদের মৃত্যুর শঙ্কাও এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেবে এই জীনদায়ী ওষুধটি। যাঁদের শ্বাস প্রশ্বাস সচল রাখতে কৃত্তিমভাবে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে সেই রোগীদের ক্ষেত্রেও ডেক্সামেথাসোন দুর্দান্তভাবে কাজ দেবে। মঙ্গলবার এমনই দাবি করেছে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা।
তাঁদের দাবি করোনা রোখার লড়াইয়ে যুগান্তকারী সাফল্য এই ওষুধ। বিশ্বের চিকিৎসার ইতিহাসে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পরই এই ওষুধের সাফল্যের বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আক্ষেপের সঙ্গে জানিয়েছে ব্রিটেনে মহামারীর শুরু থেকে করোনায় আক্রান্তদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হলে অন্তত ৫ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতো।
তবে, করোনায় আক্রান্ত ২০ জনের মধ্যেই ১৯ জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হয় না। আক্রান্ত সাধারণ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। এমনই মত ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের। তবে, যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, করোনায় গুরুতর আক্রান্ত খুবই অল্প সংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়, তাঁদেরকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়।
একমাত্র প্রচণ্ড সঙ্কটজনক অবস্থায় থাক এই রোগীদের ক্ষেত্রেই ডেক্সামেথাসোন কার্যকর ভূমিকা নেবে। ওষুধটি শুধুমাত্র হাসপাতালে থাকা গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ একেবারেই প্রয়োগ করা যাবে না। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই কোনো ভাবে এই ওষুধটি বাড়িতে নেওয়া যাবে না। নিজে নিজে ওষুধটি গ্রহণ করা যাবে না বলে সর্তক করে দিয়েছেন গবেষকরা।
ওষুধটি ইতিমধ্যে নানা জটিল রোগে বিভিন্ন অবস্থায় জ্বালা যন্ত্রণা, প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডেক্সামেথাসোন ওষুধটি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষয় ক্ষতি বন্ধ করতে সহায়তা করে। তবে, অতরিক্তি মাত্রায় এই ওষুধ প্রয়োগে প্রচণ্ড পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সাইটোকাই স্ট্রম কলা হয়। এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ২ হাজার রোগীর ওপর ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করেছিল। তবে, হাজার বেশি রোগীর ওপর এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়নি বলে গবেষক দলের পক্ষে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা চলাকালীন ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগের ফলে তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ থেকে ২০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। যেসব রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল তাঁদের ক্ষেত্রেও ২৫ থেকে ২০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমানো গেছে।
এই ওষুধ প্রয়োগে প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক পিটার হরবাই বলেছেন, ডেক্সামেথাসোন একমাত্র ওষুধ যার মাধ্যমে মৃত্যুহার কমানো গেছে। যা যুগান্তকারী সাফল্য পাওয়া গেছে বলে এদিন দাবি করেছেন অধ্যাপক হরবাই। প্রধান গবেষক অধ্যাপক মার্টিন ল্যাইে বলেন, অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, ভেন্টিলেশনে থাকা প্রতি আটজন রোগীর মধ্যে এই ওষুধের মাধ্যমে একজনকে বাঁচানো সম্ভব।