কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ট্রুডোর নিজের দলের অন্দরেই তীব্র হয়েছে তাঁর ইস্তফার দাবি। আগামী ২৮ অক্টোবর সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁর দলের সাংসদরা । জানা গিয়েছে, লিবারেল পার্টির একাধিক সাংসদ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ইস্তফার দাবি করেছেন। এই ইস্যুতে বুধবার লিবারেল সাংসদরা পার্লামেন্ট হিলে একত্রিতও হন বলে জানা গিয়েছে। ফলে ত্রুদোয়ার দলের অন্দরেই যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে তা স্পষ্ট হচ্ছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চূড়ান্ত ভারত বিরোধিতার মাশুল গুনতে হচ্ছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, লিবারেল পার্টির ২৪ জন সাংসদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে জাস্টিন ট্রুডোর ইস্তফার দাবিতে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছেন। বুধবারের বৈঠকে সাংসদরা তাঁদের উদ্বেগ এবং হতাশা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সামনেই প্রকাশ করেন। রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে সাংসদরা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। এদিনের বৈঠকে সাংসদরা একাধিক নথিও পেশ করেছেন যেখানে দাবি করা হয়েছে ট্রুডোর ইস্তফার দাবি যুক্তিযুক্ত। তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে সংসদ সদস্যদের প্রত্যেককে ২ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ২০ জন ট্রুডোকে পরবর্তী নির্বাচনের আগে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। ২৪ জন সাংসদ আগামী নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ট্রুডোর ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন। বিপরীতে বেশ কয়েকজন সাংসদ আবার ট্রুডোর পাশেও দাঁড়িয়েছেন।
দলের শীর্ষ নেতা তথা দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলেরই অনাস্থা প্রকাশ ট্রুডোকে যথেষ্ট চাপের মুখে রেখেছে তা বলাই বাহুল্য। বুধবারের বৈঠকের পরই তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে লিবারেল সাংসদরা ট্রুডোকে আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তবে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রুডো যদি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা না দেন, তবে দলের তরফে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা স্পষ্ট নয়।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, কূটনৈতিক অবস্থান, হাউস অব কমন্সে ট্রুডোর রাখা বক্তব্য ঘিরে ক্ষুব্ধ তাঁর দলের সাংসদরাই। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রুডোর বিরুদ্ধে আগেই ক্ষোভ জমেছিল দলের সাংসদদের মধ্যে। দেশের অভিবাসন মন্ত্রী মার্ক মিলার কিছু লিবারেল এমপিদের হতাশার কথা স্বীকারও করে নেন। সম্প্রতি খালিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার ইস্যু নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সরাসরি ভারত বিরোধী অবস্থান নেন, তাতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। নিজ্জর হত্যায় ভারতের হাত রয়েছে বলে বরাবর অভিযোগ করে এসেছেন ট্রুডো। গত বছর সংসদে দাঁড়িয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, খালিস্তানি জঙ্গি নিজ্জরের হত্যায় ভারতের সক্রিয় ভূমিকা থাকতে পারে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এরপরও থেমে থাকেননি ট্রুডো।
সম্প্রতি কানাডা সরকার নিজ্জরের মৃত্যুর তদন্তে ভারতের হাই কমিশনার ও কূটনীতিকদেরও সন্দেহের তালিকায় নিয়ে আসে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। এই ঘটনার জেরে সম্প্রতি ভারতের বিদেশ মন্ত্রক দিল্লিতে কানাডার কার্যনির্বাহী হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট হুইলার-সহ ৬ কুটনীতিককে বহিষ্কার করে। অন্যদিকে কানাডাও ৬ ভারতীয় কুটনীতিককে বহিষ্কার করে।