পাকিস্তানের রেল স্টেশনে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৬, আহত ৬২

পাকিস্তানের কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ২৬ জনের। আহতও হয়েছেন ৬০-এর বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহতরা নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি।

যে সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন স্টেশনে প্রচুর ভিড় ছিল। একটি যাত্রীবাহী ট্রেন যাওয়ার কথা ছিল স্টেশন থেকে। বিস্ফোরণের পর কোয়েটা রেল স্টেশনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সকলেই পালানোর চেষ্টা করতে থাকেন। ফলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ স্টেশনে একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। ছাড়ার আগে ট্রেনে ওঠার জন্য যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করছিলেন। সেই সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে জরুরি সহায়তা বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়। রেলওয়ে কর্মী এবং নিরাপত্তা রক্ষীরা আহত যাত্রীদের উদ্ধার করার কাজে হাত লাগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাপত্তা রক্ষীরা স্টেশনটি ঘিরে ফেলে। এলাকাটি সিল করে দেয়।


হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ। কোয়েটার ডিভিশনাল কমিশনার হামজা শাফকাত বলেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলির অনুমান, এই বিস্ফোরণ আসলে একটি আত্মঘাতী হামলা।

বালুচিস্তানের ইনস্পেক্টর জেনারেল মহম্মহ আনসারি বলেন, ইনফ্যান্ট্রি স্কুলের সেনা সদস্যদের নিশানা করেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। সুইসাইড বোম্বারের দেহ উদ্ধার হয়েছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিকর্তা ওয়াসিম বেগ বলেন, বিস্ফোরণে আহত আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৬২ জন। ওই এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, স্টেশন এবং ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করার জন্য। কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষীও প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

বালুচিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বখত মুহাম্মদ কাকার আহতদের চিকিৎসার তদারকি করতে কোয়েটা ট্রমা সেন্টারে যান। তিনি বলেন, সিভিল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, আরও চিকিৎসককে তলব করা হয়েছে।

বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, নিরপরাধী মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। জঙ্গিদের টার্গেট এখন নিরীহ মানুষ, শ্রমিক, শিশু ও মহিলা। যারা নিরীহ মানুষকে টার্গেট করছে, তাঁরা ক্ষমার অযোগ্য। সন্ত্রাসবাদীদের মানুষ বলা যায় না। ওরা মানবতা থেকে ছিটকে পড়েছে। ওরা পশুর চেয়েও অধম।

কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রেল বিস্ফোরণের পিছনে জড়িত অপরাধীদেরও ধরা হবে। বিস্ফোরণের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনও মূল্যে হোক না কেন, বালুচিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদে শিকড় উপড়ে ফেলব।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বালুচিস্তান সরকারের কাছ থেকে তদন্ত রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি। এক বার্তায় শেহবাজ বলেন, যাঁরা নিরীহ মানুষদের প্রাণ কেড়েছে, তাদের বড় মূল্য চোকাতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ইউসুফ রাজা গিলানিও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যারা নিরীহ মানুষদের টার্গেট করে, সেই সব জঙ্গিরা মানবতার শত্রু। শেহবাজ ও গিলানি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি মুখ্যমন্ত্রী বুগতির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। বিস্ফোরণের নিন্দা করার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।

পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণের খবর অবশ্য নতুন নয়। প্রতিদিনই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে পাকিস্তানের নানা প্রান্তে। কয়েকদিন আগেও পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানে বোমা বিস্ফোরণে ৪ নিরাপত্তাকর্মী নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন। এ ছাড়া খাইবার পাখতুনখোয়ায় একটি স্কুলের কাছে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে দুই শিশু নিহত হয়।

তারও আগে পাকিস্তানের বালুচিস্তানে একটি স্কুলের কাছে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণে পাঁচ শিশু-সহ সাতজন নিহত এবং অন্তত ২২ জন আহত হন। বাইকে আইইডি বসিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।