দেশে করােনাভাইরাসের সংক্রমণরেখা আবার ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় দুই সপ্তাহ ধরে রােগী শনাক্তের হার বেড়েছে। গতকাল শনিবার শেষ হওয়া সপ্তাহে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আজ দেশে করােনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের অষ্টম মাস পূর্ণ হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে সরকার বলে আসছিল, আসন্ন শীতে করােনা ভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা আছে। শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচেছ। একই সঙ্গে সংক্রমণ বৃদ্ধি র ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করােনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে, তা বলার মতাে পরিস্থিতি এখনাে হয়নি। এ জন্য আরও কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শুরু থেকে সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরােধ), কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আলাদা করা), আইসােলেশন (বিচিছন্ন রাখা) এসব যথাযথভাবে হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যবস্থাপনা আরও ঢিলেঢালা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য করােনার দ্বিতীয় ঢেউ মােকাবিলায় এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করােনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তিন মাসের মধ্যে তারা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। চীনের পর সবচেয়ে করােনার বেশি প্রকোপ দেখা গিয়েছিল ইউরােপের দেশগুলােতে। সেখানকার দেশগুলাে তিন থেকে চার মাসের মাথায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনে । কিন্তু এখন । ইউরােপে আবার সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় প্রথমবারের চেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানানাে হয় ৮ মার্চ। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে। জুনে তা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। মাস দুয়েক ধরে সংক্রমণ কমেছে। তবে দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার দেশে সংক্রমণের ৩৫তম সপ্তাহ ( ১ থেকে ৭ নভেম্বর ) শেষ হয়। এই সপ্তাহে মােট নতুন রােগী শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৮০ জন। আগের সপ্তাহের তুলনায় নতুন রােগী বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। টানা ছয় সপ্তাহ পর দেশে এক সপ্তাহে রােগী শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে উঠল।
সপ্তাহওয়ারি হিসাবে দেখা যায়, রােগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরীক্ষা বিবেচনায় রােগী শনাক্তের হারও বাড়ছে। গতকাল শেষ হওয়া ৩৫তম সপ্তাহে রােগী। শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৮৪। ৩৩তম সপ্তাহে ( ১৮-২৪ অক্টোবর ) যা ছিল ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
নতুন রােগী বাড়লেও এই সপ্তাহে আগের চেয়ে মৃত্যু কমেছে। এই সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য নতুন রােগী বাড়তে শুরু করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে হিসাবে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মৃত্যুও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করােনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪৭৪ জনের দেহে করােনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।