চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার: হামলা রুখতে ইউনূস সরকারের কাছে আবেদন ইসকনের

চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। ফাইল চিত্র

ইসকনের বাংলাদেশ শাখা বিশিষ্ট হিন্দু নেতা ও ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সনাতনীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সহিংসতা ও হামলার জন্য মুহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে একটি তালিকাও পেশ করেছে। এই ধর্মীয় সংগঠনটি একটি বিবৃতিও জারি করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার সম্পর্কে জারি করা এক বিবৃতিতে উপরোক্ত বিষয়গুলি এবং আরও অনেক বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছে ইসকনের বাংলাদেশ শাখা। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট “-এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সনাতনদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সহিংসতা ও হামলারও নিন্দা জানাই। আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষকে সনাতনী সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই দেশের নাগরিক হিসাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের ন্যায়বিচার প্রাপ্য এবং আমরা জোর দিয়ে বলছি যে তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের বৈষম্য সহ্য করা উচিত নয়।’


ইসকন বাংলাদেশ শাখার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট’-এর প্রতিনিধি এবং একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস দেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির সুরক্ষার জন্য সরব হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বাকস্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করা এবং অন্যদের এই অধিকার রক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা অপরিহার্য। তার জন্য ন্যায়বিচার এবং ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মূলত তিনটি দাবি তালিকাভুক্ত করেছে ইসকনের বাংলাদেশ শাখা। এর মধ্যে রয়েছে সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ও তাদের জবাবদিহি করা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও অন্যান্য সনাতনীদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করা এবং দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অবিলম্বে ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় সনাতনী সংগঠন হিসাবে, বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ চেতনা (ইসকন) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্যরা সহ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষার জন্য নিবেদিত।

আমরা ধারাবাহিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অন্যান্য নেতাদের প্রতি সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সমাজে তাদের পূর্ণ ও সীমাহীন অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সরকার ও প্রশাসনকে এই উদ্বেগের সমাধানের জন্য সনাতনী সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

ইসকন সরকারকে বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্মস্থান ও পৈতৃক বাসস্থান। আমরা এই দেশের নাগরিক হতে পেরে গর্বিত, যেখানে আমাদের অনেক আচার্য ও সাধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয় সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সরকার ও কর্তৃপক্ষকে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং প্রতিটি নাগরিককে তাদের বিশ্বাস ও বিবেক অনুসরণ করে স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করার অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আরও বলা হয়েছে, ‘ইসকন বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রচারে নিবেদিত রয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতিকে স্বীকৃতি দেবে, সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে এবং জাতিকে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের দিকে পরিচালিত করবে।’

সবশেষে জনগণকে ‘ধর্মীয় সহনশীলতা অনুশীলন এবং যে কোনও উস্কানিমূলক কাজ এড়ানোর’ আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিটি শেষ হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিনের আবেদন নাকচ করে তাঁকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। এব্যাপারে ঢাকা ট্রিবিউন জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলামের সামনে হাজির হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তাঁর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায় এবং তাঁকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারী একটি দণ্ডে গেরুয়া পতাকা তোলার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। যদিও একজন সংখ্যালঘু নেতা বলেছেন, অভিযোগকারী মামলাটি চালিয়ে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল (বিএইচবিসিইউসি) মঙ্গলবার এই গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবং অবিলম্বে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিএইচবিসিইউসি-র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ‘সোমবার বিকেলে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা থেকে সম্মিলিতা সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানাই।’