পুলিশ-প্রশাসন এবং মৌলবাদীদের চক্রান্ত সফল হল। শেষ পর্যন্ত কোনও আইনজীবীই সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে আদালতে মামলা লড়ার জন্য এগিয়ে এলেন না। মঙ্গলবার অবকাশকালীন আদালতের বিচারক চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কোনও আইনজীবী না মেলায় জামিন পেলেন না বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। আগামী ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্রের জামিনের মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
সূত্রের দাবি, প্রাণভয়েই চিন্ময় প্রভুর হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করতে আসেননি। আদালতে এলে তাঁদের উপরে হামলা চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন এক আইনজীবী। ইসকন কলকাতার সহ-সভাপতি এবং মুখপাত্র রাধারমণ দাসের দাবি, চিন্ময় প্রভুর আইনজীবীর ওপরে মৌলবাদীরা হামলা চালিয়েছে। আইসিইউতে ভরতি আছেন তিনি। সেই কারণেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোনও আইনজীবী আজ চট্টগ্রাম আদালতে আসেননি।
সোমবার রাতেই চট্টগ্রামের পটিয়া, কোতোয়ালি-সহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু আইনজীবীদের বাড়িতে সাদা থান পৌঁছে দিয়েছে জামায়াত ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরীর অনুগামীরা। হুমকি দেওয়া হয়েছে, চট্টগ্রাম আদালতের আশেপাশে দেখলে জ্যান্ত রাখা হবে না। সাদা থান পাওয়ার পরেই প্রাণ বাঁচাতে গা ঢাকা দিয়েছেন হিন্দু আইনজীবীরা।
এদিন চট্টগ্রাম আদালতে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়। তারই মধ্যে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ ছাড়া মিছিলে মহানগর পিপির পদত্যাগের দাবিও জানান তাঁরা। বাংলাদেশের সরকারি আইনজীবীদের দাবি, আদালতের ঘটনাক্রম থেকে প্রমাণিত বাংলাদেশে ন্যায়বিচার আছে। চিন্ময় প্রভুকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়ার জন্যই শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হল বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। দায়রা জজ আদালতে অপেক্ষমান থাকার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও জামিন শুনানি করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শুনানিতে আসামি পক্ষের কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তিনি অবশ্য হুমকির কথা মানতে চাননি। তাঁর সাফ দাবি, কেন অংশ নেননি, জানি না। শুনানিতে অংশ নিতে কোনও আইনজীবীকে ভয় দেখানো কিংবা হুমকি দেওয়ার কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। এখন পর্যন্ত কোনও আইনজীবী আমাদের কিছু জানাননি।
গত ২৫ অক্টোবর একটি জনসভা হয়েছিল চট্টগ্রামে। সেই জনসভার পরই চট্টগ্রামের স্থানীয় বিএনপি ফিরোজ খানের অভিযোগের ভিত্তিতে ওইদিনই বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে চিন্ময়কৃষ্ণকে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চত্বর থেকে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়।