চিনা এআই সংস্থা ডিপসিকের ধাক্কায় বড় সড় পতন ঘটল আমেরিকার শেয়ার বাজারে। এআই-এর বাজারে কার্যত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডিপসিকের এআই মডেল। প্রতিদ্বন্দ্বী ওপেন এআই মার্কিন সংস্থা এনভিডিয়াকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে এই চিনা অ্যাপ। একদিনে ১৭ শতাংশের বেশি নিচে নেমেছে এই সংস্থার বাজারদর। এর জেরে আমেরিকার টেক শেয়ারের মার্কেট ইনডেক্স-এ ৩ শতাংশের বেশি পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। আর এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডা থেকে ট্রাম্প বলেন, চিনা সংস্থার তৈরি এআই মডেল ডিপসিকের আত্মপ্রকাশ মার্কিন সংস্থাগুলির কাছে অশনি সংকেত। এখনই মার্কিন এআই সংস্থাগুলির টনক নড়া উচিত বলে মনে করেন ট্রাম্প। এতদিন এই ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি নতুন ‘ওপেন সোর্স রিজনিং মডেল’ বা বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি চালু করেছে চিনা সংস্থা ‘ডিপসিক’। এরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিপসিক-আর১’। একই ধরণের আর একটি ব্যবহৃত প্রযুক্তি হল ওপেনএআইয়ের ‘চ্যাটজিপিটি’। তবে, চ্যাটজিপিটি তৈরি করতে আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির যত খরচ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম টাকায় ‘ডিপসিক-আর১’ বানিয়ে ফেলেছে চিন। তাই অনেকেই মনে করছেন, এআইয়ের প্রতিযোগিতার বাজারে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকাকে টেক্কা দেবে চিন।
এতদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আমেরিকার। কিন্তু আই-এর বাজারে চিনের প্রবেশ অতীতের সব হিসেব লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিনা ডিপসিকের ধাক্কায় একদিনে ৫০ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে মার্কিন এআই সংস্থা এনভিডিয়ার। টেক বাজার এনএএসডিএকিউ (NASDAQ)-এ ৩ শতাংশ পতনের পাশাপাশি বিশ্বের প্রথম সারির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা এনভিডিয়াতে ১৭ শতাংশ পতন দেখা দেয়। এছাড়া ব্রডকম ১৫ শতাংশ, মাইক্রোসফট ৩.৭ শতাংশ এবং গুগলের অ্যালফাবেট ২.৭ শতাংশ পড়ে যায়।ফিলাডেলফিয়া সেমিকন্ডাক্টর ইনডেক্সে ৭.৯ শতাংশ পতন দেখা দেয়।
ডিপসিকের বাজার দখলের ধাক্কায় বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রযুক্তিগত শেয়ারও জোর ধাক্কা খায়। টেক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার দিকে ঝুঁকেছেন।চিনের এই সস্তায় পুষ্টিকর এআই মডেলের জেরে প্রবল সংকটের মুখে মার্কিন সংস্থাগুলি। ডিপসিকের এই উত্থানে উদ্বিগ্ন ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, চিনা সংস্থার তৈরি ডিপসিক এআই-এর উত্থানের পর আমাদের সংস্থাগুলির এবার ঘুম ভাঙা উচিত। প্রযুক্তির জগতে আরও বেশি করে নজর দেওয়া উচিত। আমি জানি ডিপসিক বাজারে আসার পর মেটা ও ওপেন এআই-এর মতো সংস্থাগুলি যথেষ্ট চিন্তিত। শেয়ার বাজারেও এর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, চিন তথা চাইনিজ কিছু কোম্পানি এআই মডেল নিয়ে আসছে বলে পড়েছিলাম। একটি নির্দিষ্ট সংস্থা আরও দ্রুত এআই ও কম খরচের সুবিধে নিয়ে এসেছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। অল্প খরচে যদি এই ধরনের অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের চেয়ে কম খরচেই আমাদের এই কাজ সেরে ফেলা উচিত। আমাদের টেক সংস্থাগুলি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে বলেই আমি মনে করি।”
উল্লেখ্য, ডিপসিক হল মেটা এআই, চ্যাট জিপিটির মতোই অ্যাসিস্টেন্স অ্যাপ। যে কোনও রকম প্রশ্নের দ্রুত উত্তর দেয় এই প্রযুক্তি। সাধারণ সমস্যারও সমাধান দেয় । গত সপ্তাহে ডিপসিক অ্যাপের লঞ্চ করে চিন। প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যাটজিপিটিকে পিছনে ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রি অ্যাপ হিসেবে সবথেকে বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে এই ডিপসিক।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এ ভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে আমেরিকার একচেটিয়া আধিপত্যে থাবা বসাবে চিন। উল্লেখযোগ্য হল, বর্তমানে চিনকে এনভিডিয়া এআই চিপ রফতানি বন্ধ রেখেছে আমেরিকা। কিন্তু তাতে ডিপসিকের সাফল্যে এতটুকুও ভাটা পড়েনি। পাল্টা আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চিন।