• facebook
  • twitter
Thursday, 12 December, 2024

ঢাকায় বিএনপি-র ভারতীয় হাই কমিশন অভিযান

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিই সে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে। সম্প্রতি মুহাম্মদ ইউনূস সে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বৈঠক ডাকলেও সেখানে আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-র কোনও প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।

রবিবার দুপুরে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের দপ্তরের উদ্দেশ্যে বিএনপির মিছিল। সৌজন্যে: পিটিআই

রবিবার ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে অভিযান বিএনপি-র। মিছিল করে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিএনপি-র ছাত্র, যুব এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। তবে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে পৌঁছনোর আগেই রামপুরায় মিছিল আটকে দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। সেখানে ব্যারিকেড করে খালেদা জিয়ার দলের এই মিছিল থামানো হয়। যদিও দলের তরফ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়।

সেই স্মারকলিপিতে একাধিক বিষয়ে অভিযোগ জানায় খালেদার দল। উঠে আসে বাংলাদেশ ত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় প্রসঙ্গও। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে জমা দেওয়া বিএনপি-র স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, ভারতের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থেকে হাসিনা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। এটা বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না বলে দাবি করা হয়। বিএনপির স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, পরস্পরের প্রতি আস্থা, সমতা, বিশ্বাস এবং সম্মানের ভিত্তিতে দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত হবে। তারা মনে করছে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দু’দেশের স্থিতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রয়োজন রয়েছে।

সম্প্রতি, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে সামিল হন এক দল মানুষ। বিক্ষোভকারীরা সময়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী এড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। ঘটনার জেরে একাধিক গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এদিন ঢাকায় বিএনপি-র স্মারক লিপিতে আগরতলায় সেই আক্রমণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে। দু’দেশের সম্পর্কের টানাপড়েনে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে ‘অবন্ধুসুলভ’ বলেও দাবি করা হয়েছে।

সোমবার ঢাকায় যাচ্ছেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী। সেখানে দুই দেশের বিদেশ সচিবদের বৈঠক রয়েছে। তাঁর আগে বিএনপি-র এই অভিযান বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এদিকে রবিবার বিএনপির মিছিলের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা শহরের রাজপথ। দলের কার্যালয় নয়া পল্টন থেকে রামপুরা সেতু পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে মিছিল। রামপুরায় পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকে দেওয়ার ফলে এখানকার সেতুর কাছে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাস্তা স্তব্ধ হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের মৌলবাদী শক্তির নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের ওপর একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। এরপর চিন্ময়কৃষ্ণের ওপর গ্রেপ্তারির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারত। যার জেরে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ও ভারতের মোদী সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছে ভারত সরকার। তা সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনকি হিন্দু সাধু চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর আইনি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে একেবারেই আমল দিতে রাজি নয়। বরং এটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে ভারতকে মাথা ঘামাতে নিষেধ করেছে। তারা পাল্টা দাবি করেছে, সেদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে রয়েছে।

অনেকের ধারনা, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিই সে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে। সম্প্রতি মুহাম্মদ ইউনূস সে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বৈঠক ডাকলেও সেখানে আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-র কোনও প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র বিএনপি-কে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।