সংবিধান বাতিলের ক্ষেত্রে জামাতকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি

ফাইল চিত্র

সৈয়দ হাসমত জালাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্র আপাতত স্থগিত থাকলেও এই ঘোষণাপত্র নিয়ে অতি সক্রিয়তা এবং ‘বাহাত্তরের সংবিধানকে কবরস্থ করার’ হুমকি নিয়ে খালেদা জিয়ার বিএনপি দলের নেতাকর্মীদের মনে নানান সন্দেহ দানা বাঁধছে। সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়টিতে তাঁরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। এই উদ্যোগকে তাঁরা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা বলেও মনে করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাওয়া পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামী বা ‘জামাত’ নিজেদের পালে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকাংশ উপদেষ্টাই যে জামাতের সমর্থক, এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট। আর তাই বৃহস্পতিবার বিএনপি-র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুললেন। এদিন দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিজভী তাঁর বক্তৃতায় জামাতের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘একাত্তরে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল? আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? আপনারা কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন?’


এর আগে গত রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, এক সাংবাদিক সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে জুলাই বিপ্লবের ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে। তাতে ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগ’কে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক বলে ঘোষণা করা হবে এবং সেই সঙ্গে ‘মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ’ করা হবে। সংবিধান সম্পর্কে এই ঘোষণা একান্তই অনভিপ্রেত বলে মনে করে বিএনপি। বিএনপি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ সংবিধান অর্জন করেছে। এই সংবিধানের অপব্যবহার করলে তা সংশোধন করে সময়োপযোগী করা যেতে পারে। কিন্তু বাতিল করার প্রশ্ন উঠবে কেন! বর্তমান বাংলাদেশের এই অস্থিরতার মুহূর্তে হঠাৎই ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট ক্ষোভ ও সন্দেহ প্রকাশ করেন।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম থেকেই সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কভাবে মত প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতৃত্ব। এমনকি আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ ‘সংবিধান বাতিল’ নিয়ে মন্তব্য করলে বিএনপি তার সমালোচনাও করেছে। এখন ঘোষণাপত্র প্রকাশের বিষয়ে ছাত্রদের বাইরে থেকে কেউ চালিত করছে কিনা, কিংবা ঘোষণাপত্রের নামে সব রাজনৈতিক দল অথবা সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বকে সামনে রেখে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করতে চাইছে কিনা, এবিষয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠে বিএনপি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টির সঙ্গে সরকার কোনোভাবেই জড়িত নয়। বরং এই বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগ’ হিসেবেই জানানো হয়েছে।

বিএনপি মনে করে, এই সময় নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী বিশেষ লাভবান হবে না। তাই এই ধরনের ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের নামে নির্বাচনের দাবিকে গুরুত্বহীন করে বর্তমান শাসন ক্ষমতা চালিয়ে যেতে চাইছে জামাত। কিন্তু বিএনপি দ্রুত নির্বাচনে আগ্রহী। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নিজেদের দল গঠনের কথা বলছেন এবং নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁরা এখনই আগ্রহী নন। দীর্ঘদিন সময় নিয়ে তাঁরা দল গঠন করে বিএনপি-কে পেছনের সারিতে ঠেলে দিতে চাইছে, এরকম আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতৃত্ব। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব ও জামায়াতে ইসলামীর কাজকর্মের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠেছেন।